আমার আরো স্বপ্ন দেখার আছে !

avatar

মানুষের স্বপ্ন কত বিচিত্র হয়, সে ডানা মেলে চিলের মতো উড়ে বেড়াতে চায় না কি ?

তড়িঘড়ি করে রাতের খাবার খেয়ে রাত ১০ টা না বাজতেই লাইট নিভিয়ে হালকাভাবে ঘোরা ফ্যানের রেগুলেটর বাড়িয়ে দিয়ে বিছানাই শোয়া মাত্রই তন্দ্রায় চোখ বুজে এলো। সারাদিনের ক্লান্তি বোধহয় শরীর-মনকে অল্প সময়ও দিলো না,একটানা লম্বা ঘুম হলো। সময় সন্ধ্যা থেকে কিভাবে যে গড়িয়ে গেল তার টেরও পেলাম না।

হঠাৎ ভোর চারটের সময় ঘুম ভাঙলো। ফজরের আজান দিয়েছে, চারদিকের আলো ফুটতে শুরু করেছে। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে একটু বাইরে বেরোতে চেষ্টা করলাম। তখনো আঁধার পুরোপুরি কাটে নি আর পাখিদের কিচিরমিচির অস্ফুট স্বরে শোনা যায় কি যায় না।প্রভাতের এমন সময়ে খুব ফুরফুরে মনে হয় নিজেকে, এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে আর যখনই খুব ভোরে ঘুৃম ভাঙে - তখন দিনের কাজ সহজ হয়ে যায়।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছি তো হাঁটছি, এমন সময় একটি পথচারীকে দেখতে পেলাম। সে স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরে হাঁটছে। মানুষের হাঁটার একটা গতি থাকে, যদিও কেউ দ্রুত কেউ ধীরে হাঁটে। হাঁটার ছন্দই আলাদা প্রত্যেকের - তারও একটা মাত্রা আছে।

কিন্তু মেয়েটিকে দেখে হাঁটার যে একটা গতি থাকে তাই ভুলে গিয়েছিলাম। সকালে ব্যায়াম করতে বেরিয়েছি, কিছুক্ষণ দৌড়ঝাঁপ দিয়ে দিনের কাজ শুরু করবো এমনটা ভেবে নিচ্ছি। যেই ভাবা সেই কাজ, যখনই রাস্তায় নেমে পাশের বাগানটার ধার দিয়ে যাচ্ছি , এমন সময় লোকটাকে প্রথম দেখলাম হাঁটছে। জায়গাটা খুব পরিচিত হলেও, মেয়েটিকে খুব অচেনা লেগেছে।
Src

সে যাই হোক, অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে হেঁটে চলেছি, ইতোমধ্যে ১০ মিনিট পার হয়ে গিয়েছে আর আমার প্রায় ১ মাইল হাঁটা শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রুপপুর দিঘী ১ বার চক্কর দিয়ে এসেছি। কিন্তু ফিরে এসে দেখলাম সে তখনো হাঁটছে। আমি একবার তাকিয়ে আবার নিজের মতো করে চলে মনোসংযোগ করলাম প্রকৃতি দর্শনে আর হালকা ব্যায়ামে।

কিন্তু তারপর পিলে চমকে গেল। যখন দেখলাম আরো মেয়েটি যে আগের জায়গাই আছে। ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে পাড়ি দিয়েছে ৫০ মিটারেরও কম জায়গা। যা দেখে প্রথমে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। তারপর আসল সত্যটা চোখে পড়লো।

মেয়েটি সদ্য নিজের চলৎশক্তি ফিরে পেয়েছে৷ এতদিন কি একটা রোগের কারণে তার হাটতে সমস্যা হতো, এখন দিব্যি পথ চলতে পারে কিন্তু গতি খুব কম৷

মানুষ সেই ছোটবেলায় আছাড় খেয়ে, ধপাস করে পড়ে আবার উঠে দাঁড়ায় -এমনভাবে একসময় হাঁটতে শিখে যায়৷ সেই ছোটবেলায় রপ্ত করা জ্ঞান বাকি জীবন কত শত চড়াই উতরাই অভিজ্ঞতা পাড়ি দিতে সাহায্য করে তার হিসেব রাখা সম্ভব হয় না। কিন্তু একবার হাঁটতে শিখে আবার যদি তা রপ্ত করতে হয় তাহলে তা মোটেই সুখকর নয়।

মেয়েটির বয়স অনুমান করলাম তিরিশের বেশি নয়, জীবনের আরো ৩-চতুর্থাংশের বেশি বাকি৷ এখনই হতাশার ভারে কাবু হয়ে যেতে রাজি নয়। তাই সে হেঁটে চলেছে, নিজের সবটুকু ইচ্ছাশক্তি দিয়ে। জীবনকে নতুন করে অনুভব করার জন্য, আবার সুস্থ স্বাভাবিক হওয়ার জন্য।

বেশ কিছুদিন আমার আক্ষেপ হচ্ছিল, কেন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া হলো না, জীবনের একটি উদ্যোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। আবার কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো - কি পারবো না।
এমন সমীকরণে হতাশা আর হাল ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা জন্মাচ্ছিল - তখনই এ মেয়েটিকে দেখে স্বপ্নের নতুন সংজ্ঞা রপ্ত করলাম।
Src

স্বপ্নের রঙের কোন মাত্রা নেই, তার ডানারও আকার নেই। কিন্তু সে এগিয়ে চলে, নতুন করে বাঁচতে শেখায়, পথ চলার অনুপ্রেরণা জোগায়৷

রাত শেষে যখন দিন হয়, তখন নতুন ভোরে শপথ নেয়া হয় এই ভেবে যে জীবনে আরো অনেক কিছু দেখার আছে, বোঝার আছে, জয় করার আছে,স্বপ্ন বোনার আছে।



0
0
0.000
0 comments