করোনার শিক্ষাঃ জীবনের কঠিন বাস্তবতা
করোনার শিক্ষাঃ
আমাদেরকে করোনা ভাইরাস নামক মহামারী আঘাত যেমন হেনেছে তেমনি দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে অনেক নতুন কিছু বিষয় । এমন অনেক কিছুই শিখছি এ পরিস্থিতি থেকে যা আগে বুঝতে পারতাম না কিংবা চিন্তা করতাম না । আজকে আমি এরকম কয়েকটি বিষয় এখানে শেয়ার করতে যাচ্ছি ।
মানুষের অসহায়ত্বঃ
করোনা ভাইরাস আসার আগেও পৃথিবীবাসী অনেক দাপটের সঙ্গে পৃথিবীতে বসবাস করে দেখিয়েছে । পৃথিবীর মানুষ এমন ভাবে চলাফেরা করত যেন সে এই পৃথিবীর সবকিছু করতে পারে । যেন কোন কিছুতেই মানুষের এই যাত্রা অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারবেনা কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর আমরা দেখেছি কোভিড ১৯ আক্রান্ত হওয়া থেকে মানুষ নিজেকে বাঁচাতে পারছে না । মানুষ পারছে না এই ভাইরাসের একটা ভালো প্রতিশোধক তৈরি করতে । ভাইরাস এর কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করছে । যেন এমন পরিস্থিতি যে কোথাও কেউ নেই এবং কিছুই করার নেই । শুধু আলোচনা করা ছাড়া মানুষের আর কিছুই করার নেই । এই পরিস্থিতি একটা শিক্ষা দিয়ে গেল মানবজাতিকে যে মানুষ অনেক শক্তিশালী নয় বরং খুব বেশি ভালনারেবল। মানুষের অসহায়ত্ব দেখা গেছে দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে জনপদে জনপদে । প্রকৃতির এই খেলার সামনে মানুষ বড়ো বেশি অসহায় ।
Image by Lothar Dieterich from Pixabay
চিকিৎসা
কিছুদিন আগেও হয়তো মানুষ ভাবতো যে চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা অনেক উন্নত হয়ে গেছি । আমরা প্রয়োগ করছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নততর প্রযুক্তি আর্টিফিশিয়াল অর্গান ইত্যাদি । উন্নত প্রযুক্তি আমাদেরকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে দিয়েছে অনেক সফলতা । কিন্তু এই ভাইরাস পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় মোটেও ততটা উন্নত হতে পারেনি যতটা আগে ভাবা হতো । যদি তাই হতো তাহলে গবেষকবৃন্দ খুব দ্রুতই এর প্রতিকার বা প্রতিকারের পথ খুঁজে পেত । নতুন কিছুতে ভালোভাবে মনোনিবেশ করে সেটা থেকে প্রতিকার ও কিংবা প্রতিষেধক তৈরিতে প্রায় ছয় মাস ব্যর্থ গোটা বিশ্ব । চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি হয়েছে একথা ঠিক কিন্তু এই পরিস্থিতির পর আমি অন্তত এই কথা অবলীলায় স্বীকার করতে চায় না যে আমরা চিকিৎসাশাস্ত্রে অনেক অনেক বেশি উন্নত হয়ে গেছে । হ্যাঁ এসেছে কিন্তু তা কতটা উপযুক্ত মানের তা নিয়ে সংশয় বা প্রশ্নের যোগান দিয়েছে এই পরিস্থিতি ।
Image by Myriam Zilles from Pixabay
সহযোগিতা
মানুষ একে অন্যকে সহযোগীতা করতে এবং উপকার করতে ভালোবাসে । আর এই কাজটি করতে পারি বলে আমরা মানুষ । মানুষ আর অন্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য মনুষ্যত্বের মধ্যে । এই মনুষ্যত্বের বিচারে আমরা ভালোই ছিলাম কিন্তু করনা পরিস্থিতি এমন এমন কিছু ঘটনার জন্ম দিয়েছে যাতে একথা শিক্ষা নেয়া যায় যে কঠিন পরিস্থিতিতে কেউ পাশে আসবেনা । করোনাভাইরাস এর কথা বাদই দিলাম । আপনি আমি যদি কোন এমন পরিস্থিতির শিকার হয় যেখান থেকে অন্যদের কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে কেউ পাশে আসবেনা । করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রথমদিকে আমরা এমন কিছু উদাহরণ দেখেছি যেখানে নিজে বাঁচার জন্য রোগী নয় কিংবা সন্দেহ ছিল এরকম লোকজনের সাথে কত নির্মম আচরণ করা হয়েছে । আমরা দীর্ঘ সময়ে পৃথিবীতে বেঁচে এবং টিকে থাকতে চাই । অথচ এই পৃথিবী আমাদের থাকার জায়গা নয় । পরিস্থিতিতে আমি এটা শিখতে পেরেছি যে ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে বা খুব বিপদের সময় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না । নিকটাত্মীয়রা শুধুমাত্র পাশে থেকে যাবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের পাওয়া যাবে না । মানুষ প্রয়োজনের সময় কিংবা বিপদের সময় যে পরিচয় রাখে সেটাই তার প্রকৃত পরিচয় ও আচরণ । তাই একথা বলে দেয়া যায় যে মানুষ যতই উন্নত হোক না কেন মনের দিক থেকে বা মানবতা মানবিকতার দিক থেকে অত বেশি উন্নত হতে পারেনি । যদিও আমরা মানবিকতার অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ দেখেছি এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও তবে সামগ্রিকভাবে বিষয়টি আমার কাছে এ রকমই মনে হয়েছে ।
Image by Lothar Dieterich from Pixabay
উন্নত বিশ্বের অবস্থা
আগে আমরা ভাবতাম উন্নত বিশ্বে খুব সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য-চিকিৎসা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে । কিন্তু ভাইরাস এসে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে কার দৌড় কতটুকু । আমরা যাদেরকে অনেক শক্তিশালী কিংবা অনেক সক্ষম মনে করতাম তাদের অবস্থা পৃথিবীবাসী দেখে নিয়েছে । যেসব দেশ বাহ্যিকভাবে খুব সক্ষম এবং স্বাবলম্বী মনে হতো সেসব দেশে চিকিৎসা কিংবা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গুলো অতটা শক্তিশালী নয় তা এখন টের পাওয়া গেছে । কোভিড ১৯ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেক দেশের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়নি । কেউ কাউকে দেখে দেখা গেছে পরিস্থিতির কাছে নিজেকে ছেড়ে দিতে । মানুষকে আটকালে অর্থনীতি তে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে আবার মানুষকে ছেড়ে দিলে মানুষের জীবনের ওপর ব্যাপক হুমকি আসছে । অনেকেই এই পরিস্থিতি গুলোকে সামাল দিতে গিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে তাদের সক্ষমতার অবস্থানটি । উন্নত বিশ্ব মা নেই সবদিক থেকেই উন্নত নয় । অনেকেরই সক্ষমতার অভাব রয়েছে । কারো কারো রয়েছে কৃষিতে ঘাটতি যারা কিনা অনেক চিন্তার মধ্যে আছে যে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি হলে তা নির্ভর করা যাবে কিনা । সর্বোপরি আমার কাছে উন্নত বিশ্বের সক্ষমতা যতটা ভালো হতো ততটা যে নেই সেটা মনে হয়েছে ।
Image by Syaibatul Hamdi from Pixabay
আজকে এখানেই শেষ করছি । আমার লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ । ভালো লাগলে লাইক করতে পারেন । আবার দেখা হবে অন্য আরেকটি ব্লগে অন্য কোন একদিন ।
আমি কে
আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।
Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful
Find me on social media
Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter
Thanks to @engrsayful for burning 800 PLANET! You have been rewarded with a 80% vote. Your action makes this project grow and helps to restore a Clean Planet! Join us on our Discord Channel and on our website
করোনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে এখনো আমরা স্বাস্থ্যখাতে কতটা পিছিয়ে আছি! তাই আমাদের এখনই এই দিকটাতে বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার। নয়তো ভবিষ্যতে এরকম অন্য কোন আরো ভয়াবহ মহামারির আক্রমণে আরো ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আর আপনার সর্বশেষ কথায় একমত, পারস্পরিক সহযোগিতাই পারে আমাদেরকে এধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের।
পৃথিবীর অগ্রগতিতে মাঝে মাঝে ধাক্কা দরকার যেমন ২য় বিশবযুদ্ধের পর পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে
ধাক্কাগুলো মাঝে মাঝে ভেঙেচুরেও দেয়। মঙ্গলজনক পরিবর্তন আসুক এটাই কামনা।