গ্রামের মেধাবী শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে নাত!
কি তাদের ভবিষ্যৎ কি আমাদের ভবিষ্যৎ ।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাবিশ্বেই বাচ্চাদের লেখাপড়ার উপর এক মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, প্রভাব পড়েছে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশেও । বাচ্চারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না, পারছে না তাদের নিয়মিত কাজটি অর্থাৎ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে । এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের ছেলেদের মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত না ঘটলেও তাদের ক্ষেত্রে ঘটছে পড়াশোনার দুর্ভোগ । শহরের ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা কম কারণ ঘরে থাকলেও অভিভাবকদের সচেতনতা ও চেস্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে অন্যদিকে গ্রামের অধিকাংশ অভিভাবক ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে সচেতন নয় । যেখানে জীবন যাত্রার মান কম সেখানে পড়াশোনার জন্য আলাদা করে টিউটর রাখা কিংবা সময় দেওয়া খুবই মুশকিল এর কাজ । যারা দিন আনে দিন খায় জীবন জীবিকার জন্য কষ্ট করে যায় তাদের পক্ষে আলাদা করে ছেলেমেয়ের জন্য গুরুত্ব দেওয়া এই প্রেক্ষাপটে কল্পনা করা যায় না । যেখানে জীবন সংগ্রামটাই হবে ভবিষ্যতের জন্য খুব কষ্টকর সেখানে আলাদা করে বাচ্চাদের পড়াশোনার গুরুত্ব দেওয়া কল্পনার বিষয়। । গ্রামের অধিকাংশ অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠিয়েই নিশ্চিন্তে বসে থাকেন । যেসব ছেলে মেয়েরা কিছুটা মেধাবী থাকে বা একটু ভালো সুযোগ পায় তারা স্কুল থেকেই তাদের শিক্ষাটা অর্জন করে নিতে পারে । এজন্যই আমরা দেখে থাকি বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বড় বড় পদে গ্রামের ছেলেরা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে তাদের যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রমাণ রেখে যাচ্ছে । গত তিন মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ঐসকল ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধের মতোই যারা কেবলমাত্র স্কুলে যেত এবং আসতো পড়াশোনার জন্য । তাদের পড়াশোনা আবার কখন শুরু হবে এবং সেই শুরুটা আগের অবস্থান থেকে শুরু হবে কিনা এ ব্যাপারে রয়েছে অনেক শঙ্কা ।
ছবির উৎসঃ Image by Kant Smith from Pixabay
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র বলতে একটি কথা রয়েছে যেটা বুঝায় যারা দরিদ্র তারা বিভিন্ন কারণে সুযোগ-সুবিধাগুলো নিতে পারে না ফলে তারা দরিদ্র থেকে যায় । এখানে এই নীতি প্রযোজ্য । যেহেতু তারা তাদের সন্তানদেরকে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা দেয়ার জন্য যথেষ্ট খরচ করতে পারে না কিংবা সময় দিতে পারে না তাই পরবর্তীতে তাদের সন্তানরা এরকমই দরিদ্র থেকে যায় । আর এভাবে করেই এই চক্রের মধ্যে একটা শ্রেণি আটকে থাকে খুব বেশি অতিরঞ্জিত ছাড়া এই চক্র থেকে কেউ বের হতে পারে না । যদিও আমরা বলে থাকি সবার শিক্ষার সমান অধিকার রয়েছে তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানের দিক থেকে এবং টাকা-পয়সা লেনদেনের দিক থেকে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় । কেউবা অনেক ভালো টিচারের কাছে পড়তে পারছে আবার কেউবা ভাঙ্গা ঘরেই ক্লাস করছে । আর এভাবেই এগিয়ে চলছে বৈষম্যের শিক্ষাব্যবস্থা । যদিও এ ধরনের ব্যবস্থার জন্য সরকার বা সিস্টেমকে দোষারোপ করা যাবে না । একজন দুইজন বলতে কিছু নেই । সরকার দেশ ও সমাজ যাই বলি না কেন সেটার উন্নয়ন মানে আমাদের সবার কন্ট্রিবিউশন । গ্রামের কোন স্কুলের শিক্ষককেও কিন্তু সরকার নিয়োগ দিয়ে থাকেন । যদি তিনি তার আন্তরিকতা, চেষ্টা, মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে ছাত্রদেরকে ভালো কিছু শেখানোর চেষ্টা করে যান তাহলে সেটাও খুব ভালো সুফল বয়ে আনবে গ্রামের অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ।
ছবির উৎসঃ Image by AkshayaPatra Foundation from Pixabay
পরিশেষে বলতে চাই, একটা দেশের অর্থনীতি কিংবা সামাজিক আকার শুধুমাত্র কিছু জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের মধ্যেই নিহিত থাকে না । এজন্যই যখনই উন্নয়নের সূচক পরিমাপ করা হয় তখন এটাও দেখা হয় যে ধনী এবং গরিবের মধ্যে পার্থক্য অর্থাৎ সম্পদের পার্থক্য কতটা রয়েছে । যদি এই পার্থক্য খুব বেশি হয় তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি অনেক বেশি মাথাপিছু আয় নিয়েও আমরা অনেক ভালো উন্নত বলতে পারব না । কারণ হলো কিছু লোকের হাতে অনেক বেশি সম্পদ থাকলে সেটা সবাইকে দিয়ে যখন ভাগ দেওয়া হবে তখন সবার ভাগে একটু বেশি পড়বে । যে সন্তান বা যে শিশুটি আজকে এরকম একটা পরিবেশের কারণে অথবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে শিক্ষার প্রকৃত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিংবা অপরাপর তার সমসাময়িক বয়সের ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে কি তার ভবিষ্যৎ । ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে যেমন আগামী একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর যেমন ৫০ বছর কিংবা ৩০ বছর পর আমরা থাকবো না । এই জেনারেশন টাই তখন হয়তোবা দেশকে, জাতিকে পরিচালনা করবে । এখন যদি তারা মোবাইলে আসক্ত থাকে, নিজের বেসিক এবং প্রকৃত মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে কি হবে তাদের ভবিষ্যৎ আর কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্ন রইল
আমি কে
আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।
Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful
Find me on social media
Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter
Hi @engrsayful, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টাতে আলোকপাত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে আমরা যখন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর কথা বলি, তখন অর্থনৈতিক সাময়িক অগ্রগতিকে প্রাধান্য না দিয়ে বরং 30 বা 50 বছর পরে যেন আমরা এর চেয়েও ভাল অবস্থানে থাকতে পারি, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। আর তার জন্য দরকার সর্বস্তরের মানব সম্পদ উন্নয়নের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গ্রামীণ জনশক্তি যেন এই কোয়ারেন্টাইন শুরু হওয়ার পর আরও পিছিয়ে পড়ছে। শহরের ছেলে মেয়েরা আমি দেখেছি, অনলাইনের জুম অ্যাপস দিয়ে নিয়মিত ক্লাস কোচিং ইত্যাদি করছে। কিছুটা হলেও তারা পড়াশোনার মধ্যে আছে। কিন্তু গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই সুযোগ পাচ্ছে না। অনেকের এই টেকনোলজিতে অভ্যস্ত নয়। অনেকেরই সামর্থ্য নেই। তাদের কথা চিন্তা করার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।