অবগাহন
আমার এক বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে, জীবন সংসার থেকে যেসব দর্শন আহরণ করবার ছিল, তা সবটা আহরিত হয়ে গেছে আমার। এখন আমি যাই পড়ি, যাই দেখি, কিম্বা যাই শুনি... তার সবটাই ঘুরেফিরে অই একই গণ্ডিতে পুরনো জিনিস নতুন মোড়কে'র মতই লাগে।
ব্যাপারটা খুব ঔদ্ধ্যত শোনালেও আসলে পুরোপুরি মিথ্যে না।
একদম স্বতন্ত্রভাবে একমাত্র রুমি ছাড়া আর কেউ বহুদিন ভাবাতে পারেনি।
যাকজ্ঞে সে কথা। অ্যানিমে জিনিসটাকে বরবারই এর ভক্তকূল ছাড়া সবাই খুব একটা উঁচু নজরে দেখেনা। তবে বর্তমানে আসলেও আশি শতাংশ বস্তাপচা সব খেলো জিনিসপত্তর আসছে কিংবা ভালো কিছু এলেও প্রকৃত অনুরাগী'র অভাবে সেটা সামনে আসছেনা।
আমিও সদ্য পরিচিত এক সহমকর্মীকে সমগোত্রীয় অ্যানিমে ভক্ত হিসাবে পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত কাজের জায়গায়। তারই বক্তব্যে একদিন দেখা "After the Rain", উনি বলেছিলেন, "যতদূর বুঝলাম আপনার টেস্ট সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা পেয়েছি আর তার থেকেই মনে হলো, যদিও আপনার ক্লিশে রোমান্স পছন্দ না, তবে এইটা আপনার পছন্দ হতে পারে। দারুণ একটা গল্প"
সিনোপসিস পড়ে ভ্রু না কুঁচকে বরং কৌতূহল হয়েছে।
এক ১৭ বছর বয়সী বালিকা, এক ঝুম বৃষ্টির দিনে বিচ্ছিরি রকম এক সাদামাটা ৪৫ বছর বয়সী এক লোকের প্রেমে পড়ে যায়।
ব্যস! এই নিয়েই গল্প।
আমার "আমার আর কোনো দর্শন আহরন নিষ্প্রয়োজন" ব্যাপারটাকে আরেকবার ভাবায় মন। আমার "আমার মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণযোগ্যতা"কে তির্যক দৃষ্টি'র সামনাসামনি হতে হয়।
অদ্ভুত এক গল্প।
কিন্তু কি সেই গল্পের বুনন, কি তার সংলাপ, কি তার চিত্রায়ন, আর কি তার শব্দ গ্রহণ...
দর্শক হিসাবে আমাকে একটা আবেগের রোলারকোস্টারে আপাদমস্তক ঝাঁকুনি দিয়ে ছেড়ে দেয় শুরু থেকে শেষ অব্দি!
গল্পটা বয়ে যায় একেবারে দিঘী'র শান্ত জলের উপর বাতাসের মৃদু মন্দ হাওয়া বয়ে যাবার মত। হঠাৎ হঠাৎ যে দমকা হাওয়া একটা বড়সড় আলোড়ন যে তোলে না তা নয়।
সংলাপের বাড়াবাড়ি নেই, চরিত্রায়নের আতিশায্য নেই, শব্দ আছে কিন্তু কোনো দূষণ নেই, কথা হচ্ছে ভাষাতেই কিন্তু বাচালতা নেই।
সম্পর্কের দৃশ্যায়ন আছে, সেটার টানাপোড়ন আছে কিন্তু বোঝা হয়ে নেই...
সবথেকে চমৎকার লেগেছে, সব ধরনের আবেগ ঘনঘটা আছে কিন্তু এমন জরুরী নয় যে বিবেকের সাথে তার কোনো দ্বন্দ থাকবে।
গল্প আছে, গল্পের স্তরও আছে, পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা গল্পের লুকোচুরির মাঝে স্বতন্ত্র প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা রূপকথাও আছে।
কিছু কিছু স্লট আছে যেখানে আমার সময় থেমে গিয়েছিলো অনেকক্ষণের জন্য বারবার। তারমাঝে এই চিত্রায়নটাই বোধকরি আমার সবচেয়ে পছন্দের।
খুঁজে দেখতে হবে এই লেখকের আরো কাজ আছে কিনা।
অন্তত যে ব্যক্তি রাশোমন নিয়ে গল্প করে তার নিজের গল্পের মাঝে, এমন কাজ হবে এটাই স্বাভাবিক। এমন না যে "রাশোমন" নিয়ে আর কোথাও কোনো আলাপ হয়নি, কিন্তু কোনো আগ্রহ জাগায়নি তা। অথচ এই সূক্ষ্ণ পর্যালোচনা আমাকে অবশেষে রাশোমন পড়বার দিকে ঠেলে দিল।
তবে অ্যানিমেতে খানিকটা সংক্ষিপ্তই রেখেছে গল্প। বরং এই গল্পের প্রতি স্তর করায়ত্ত করতে মাঙ্গা (কমিক) পড়াটাই উত্তম বলে মনে করি। মাত্র ৮২টি চ্যাপ্টার। এবং অ্যানিমেতে যেমন "শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ" ব্যাপারটা থেকে যায় যেটা নিদারুণ মনোযাতনার উদ্রেক করে, সেটা মাঙ্গাতে অন্তত খানিকটা হলেও মানসিক স্থিরতা দান করে। আনিমে দেখার পর, মাঙ্গা পড়াটাও সে হিসাবে একটা উত্তম সিদ্ধান্ত হতে পারে।
যদিও এত বলেও কিছু না বলা'র চেষ্টায় কতটুকু আকৃষ্ট করতে পারলাম জানিনা,
কিন্তু এটা ভেবে খানিকটা মনঃকষ্ট হচ্ছে যে, আচ্ছা আমার মত করে এটাকে আর ভালবাসবে কে!?
এত সুন্দর একটা রিভিউ পরার পর কার না এটা দেখতে ইচ্ছা করে!জানাবো তোমাকে ভালো লাগলে 💙💙
yesss pleasee. I would love it so much to hear about your impression regardless it's nature.
Hi @fahmidamou, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON