জীবনের ধারাপাত

avatar

ইস্তিরির ভাঁজে ভাঁজে পরিপাটি জীবন হক সাহেবের।শহুরে জীবনে হাঁপিয়ে গেছেন আর মন টিকে না ওনার আার ওনার স্তী লাভলীর। তাদের ছেলেমেয়ে তাফসির, ইথারের ও ইট কাঠের, মায়া-মমতাহীন এই শহর আর ভালো লাগেনা। সারাদিন স্কুল, কলেজ, কোচিং। নেই কোন খেলাধুলা, তেমন কোন আত্নীয় স্বজন ও নেই। সারাদিন বাসা টু স্কুল, অথবা কোচিং। খেলাধুলা বলতে, মোবাইলে গেম খেলা এই টুকুনই।

হক সাহেব বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির চিফ একাউন্টেট। ভালো মাইনে। গাড়ি সুবিধা সহ প্রায় সকল সুবিধায় আছে। মালিক পক্ষ দেশে আসেনা বললেই চলে। বছরে দু-কবার। কোন বছর তো একবারও আসেনা। হক সাহেব কোম্পানির Financial Statement আর মাসের Account Statement মেইল করে দেন হেড অফিসে। মালিক লন্ডন থেকে মেইলে দিক নির্দেশনা দেন হক সাহেব তা বাস্তবায়ন করেন। আর ভিতরে ভিতরে নিজের আখের গোছাতে থাকেন।

হক সাহেবের জীবনে যা করার তা করে নিছেন তাই ওনার এখন ঢাকা শহর ভালো লাগতেছেনা। ওনার স্ত্রীর ভালো না লাগার পিছনে অবশ্য অন্য কারণ, টাকা-পয়সা, ধন -দৌলত সবই হলো এখন দরকার আত্মীয় স্বজনদের সাথে অর্থের গরম দেখানো। ঢাকা শহরে তো তেমন বলার মতে আত্মীয় স্বজনরা থাকেনা। ছেলেমেয়েদের ভালো লাগেনা ধুলাবালি, ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদি।

বছর দেড়েক ধরে নামাজ কালমে বেশ মনোযোগ দিয়েছেন হক সাহেব। দাঁড়িও রাখা শুরু করলেন। বেশ কয়েকবার হজ্জ ও করে আসলেন। উমরাহ না একেবারে বড় হজ্জ।

হক সাহেব মনে মনে ঠিক করে রাখছেন আর বছর খানেকের মতো ঢাকায় থাকবেন। এর মধ্যেই নিজ গ্রামে দুই তিনটা মাছের খামার, গরুর খামার, চিংড়ি মাছের ঘের, থানার সাথে লাগোয়া চারতলা বাড়ি করে ফেলছেন। এখন শুধু গার্মেন্টস ফ্যাকটরিটা কমপ্লিট করা বাকি। মেশিন পত্র সব চলে আসছে এখন শুধু সেটআপের ব্যাপার। হক সাহেবের সব প্রতিষ্ঠানের নামের আগে একটা কমন বিশেষণ "আল্লাহর দান" শব্দটি ব্যবহার করেন।

গ্রামে সবাই মোটামোটি এক নামেই ছিনে "আল্লাহর দান" মাছের খামার, আল্লাহর দান গার্মেন্টস!

ডিসেম্বর মাস ছেলেমেয়েদের পরিক্ষা শেষ তাই বউ আর ছেলেমেয়েদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন হক সাহেব। যাতে করে ছেলেমেয়েরা সবার সাথে মিশতে পারে। এদিকে ওনার স্ত্রী নিজের টাকার গরিমাটা একটু আগে ভাগেই দেখাতে পারেন!

গ্রামে সবার অবসর ভালোই কাটছে, এর মধ্যে হক সাহেব ও ঢাকা থেকে আসলেন। মেশিন গুলে সেটআপের জন্য বিদেশ থেকে ইন্জিনিয়ার আসলো। "আল্লাহর দান গার্মেন্টসে" সাজ সাজ রব, হক সাহেব তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে গেলেন ফ্যাক্টরিতে। সবাই যারযার মতে ঘুরে ঘুরে দেখছে। বিশাল জায়গা জুড়ে আল্লাহর দান গার্মেন্টস জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি।

হঠাৎ বিকট শব্দে চৈতন্য ফিরে আসে সবার। শব্দের উৎসের দিকে দৌড়ে গিয়ে দেখে হক সাহেবের মেয়ে ইথারের নিথর দেহ পড়ে আছে কাটিং মেশিনের পাশে। রক্তে ভিজে গেলো "আল্লাহর দান গার্মেন্টস"

Source:Pixabay1r189h.jpg



0
0
0.000
3 comments
avatar

Congratulations @ihfaisal! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You received more than 2750 upvotes. Your next target is to reach 3000 upvotes.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

Do not miss the last post from @hivebuzz:

HiveBuzz Ranking update - New key indicators
0
0
0.000
avatar

সবই আল্লাহর দান। এটা আমরা ভুলে যাই।

সম্পদের মোহে হক সাহেবের মত মানুষ গুলো এতটা অন্ধভাবে ছুটতে থাকে। ভালো-মন্দ ন্যায়-অন্যায় হালাল-হারাম এসব কিছু পার্থক্য তারা হারিয়ে ফেলে।

এমনকি একসময় সত্যি সত্যি তারা মনে করতে শুরু করে যে এগুলো আল্লাহর দান।

হজ করে এসে নিজেকে নিষ্পাপ ভাবতে শুরু করে। আর দাড়িতে হাত বুলিয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে।

পরিণতিটাও আপনার গল্পের মত এমনই হয়। সুখ-শান্তি তাদেরকে কখনো ধরা দেয় না।

0
0
0.000
avatar

আবার অনেকে মনে করে "টাকা পয়সা আল্লাহর দান, যতো পারেন ততো খান"

0
0
0.000