প্রতীক্ষা

avatar

মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানটা হঠাৎ শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায়। পুরনো জিনিস পত্রে মরিচা পড়ার পর যপ রকম শব্দ করে ঠিক সপ রকম! অথচ ফ্যানটা নতুন কেনা, ছয় মাসও যায়নি, সব দুই নম্বর টাকা তো কম নেইনি শাড়ির আচল দিয়ে রঙ চায়ের ফ্লাক্স মুছতে মুছতে বলে মরিয়ম। মা, আর কিছু দিন অপেক্ষা করো তোমারে আইপিএস কিনে দিবো, আর জং ধরা ফ্যান চেইঞ্জ করে এসি বসিয়ে দিবো। আর এই পুরনো ফ্লাক্সে করে রঙ চা খাওয়া লাগবে না। মগ ভর্তি কপি খাবো। কপির সুভাষে ভরে যাবে পুরো ঘর! ফারশীদ তার মা মরিয়মকে বলে।

তিন বেলায় ঠিক মতো ভাত জুটেনা কপি খাওয়ার সখ জাগে, নবাবজাদা! মুখে তাচ্ছিল্যের শুর তুলে ছোট ছেলে ফারশীদ কে শুনায়। শুনো মা চাকরিটা হতে দাও তারপর দেখিও সব ঠিক হয়ে যাবে। কী ঠিক হবে আমি হাড়েহাড়ে বুঝতেছি। চাকরি হলে বড়টার মতো বিয়া করে বউ নিয়া আলাদা হয়ে যাবি তা আর আমাকে বলতে হবেনা। সামনের হাল যেমনে যায় পিছনের হালও তেমনি যায়, এটা আর নতুন কী! অনেক হয়েছে এবার চা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর মরিয়ম ফারশীদ কে বলে।

শুনো মা স্বপ্ন দেখতে দোষ কী? মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে বলে জীবন এতো সুন্দর! আহা তোর কাছ থেকে স্বপ্ন, জীবন নিয়ে জ্ঞান নিতে হবেনা, অবশ্য তোর দোষ কী ছেলেপেলে শিক্ষিত হলে তো মাকে জ্ঞান দিবেই। শুন আমিও কিন্তু টেনেটুনে কলেজের বারান্দা পর্যন্ত গেছি আমাকে জ্ঞান দিবিনা কপট রাগ দেখিয়ে রান্না ঘরে চলে যায় মরিয়ম।

ফারশীদ জানে তার মায়ের রাগটা বৈশাখী ঝড়ের মতো এই আসপ এই যায় অবস্থা। অবশ্য রাগ করবেনা কেনো সারাদিন খাটাখাটুনি করে রাতের বেলায় একটু আয়েশ করে টিভি দেখবে তা বেরসিক ফ্যানটা নষ্ট হয়ে গেলো, তারউপর কারেন্ট টা একটু আগে চলে গেলো, এই যেনো মরার উপর খাড়ার গা!
মধ্যবিত্ত পরিবারের এই এক সমস্যা একটার সাথে আরেকটা জামেলা ফ্রী!

শুন বাবা মায়ের কথায় রাগ করিসনে, তোর মাতো একটু এমনই, তোরা ছাড়া আর কে আছে তোর মার? বেচারি সব কিছু ছেড়ে আমার সাথে চলে আসে আজ থেকে সাতাশ বছর আগে। তুই তো জানিস তারপর থেকে তোর মা তার কোটিপতি বাপের বাড়িতে পা দেয়নি, তারউপর তোর বড় ভাই বিয়ে করে বউ বিয়ে আলাদা হয়ে গেছে, কথা গুলো একটানা বলে সাহেদ। হুম বাবা তুমি ঠিক বলছো ফারশীদ তার বাবা সাহেদকে বলে।

ফারশীদ মনে মনে ভাবলো কাল একটা বড় কেক এনে মায়ের জন্য বাবার জন্য নতুন জামা এনে তার চাকরির খবরটা দিবে, তাই সে এতো বড় সরকারি চাকরি পাওয়ার পরও কিছু বলেনি। বলবে কী করে সন্ধ্যার একটু পর সে চূড়ান্ত ফলাফল জানতে পারে।

ফারশীদ রান্না ঘরে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে আচ্ছা মা তুমি না বলছো তোমার প্লেনে ছড়ার খুব শখ! শুন কী বলবি বল রাতদুপুরে ন্যাকামি করবিনা। আরে মা তোমার ছেলেতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব মর্যাদার চাকরি পাইছে। এখন তোমার ছেলে কয়দিন পরপরই বিদেশ যাবে, সরকারের বড়ো বড়ো কর্তার সাথে কাজ করবে তুমি বুঝতে পারছো?

পাগল ছেলে এই কথা এতোক্ষণ পেটের মধ্যে রাখলি কেন? মা আমি কাল সেলিব্রেএ করতে চাইছিলাম। তা আমি জানি, আমাকে তিতলী ফন করে সব বলে দিছে। ও! এর মধ্যে তুমি আর... । শুন তোকে কিছু করতে হবেনা তিতলী কেক নিয়ে আসতেছে। তোমরা পারো ও মা!

Source Pixabay
img_0.3498023054077464.jpg



0
0
0.000
3 comments
avatar

এরকম একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছা প্রতিটা ছেলের ই থাকে। কিছু মানুষ ওই যায়গায় পৌছাইতে পারে কেউ আবার ওইরকম পর্যায়ে পৌছাইতে পারে না।তাদের স্বপ্ন টা স্বপ্ন ই রয়ে যায়।

আপনার লিখাটিতে ওইরকম ই একটি স্বপ্নপূরণের কথা ফুটে উঠেছে। ভালো লেগেছে লিখাটি।

0
0
0.000
avatar

প্রত্যেক মানুষেরই স্বপ্ন থাকে, মানুষ স্বপ্ন দ্বারা প্রভাবিত হয় কিংবা পরিচালিত হয়, ধন্যবাদ ভাই।

0
0
0.000