টঙের দোকানে চা

avatar

received_588945389326950.jpeg

চা খাওয়ার কথা বলতে গেলেই বাঙালির ঐতিহ্যের কথা মুখে চলে আসে। চা খাওয়া নিয়ে বলতে গেলে বাঙালির ঐতিহ্যের শেষ নেই। আর সেই চা খাওয়া যদি হয় গ্রামের বয়স্কদের তাহলে তো সেখানে কথাই নেই। আমাদের বাঙালি জাতি অতীতে চা খাওয়া টা বুঝতেন না। কিন্তু যখন ব্রিটিশ শাসিত হতো তখন তারা এই চা দিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করেন। তখন বাঙালিরা বুঝতো না চা খাওয়া, এবং কোন ধারনাও ছিলো না এই চা খাওয়া নিয়ে। তখন ব্রিটিশরা বাঙালিদের ফ্রিতে চা খাওয়ানো শুরু করেন। তখন বাঙালিরাও সুন্দর তাদের দেয়া ফ্রি চা খাওয়ার জন্যে পাগল ছিলো। আমরা বাঙালি ফ্রিতে কিছু পেলে সেটা তো ছাড়ার নয়। তখন ব্রিটিশরা বাঙালিদের এই দূর্বলতা টা কাজে লাগিয়ে বাঙালিকে ফ্রিতে চা খাওয়ানো শুরু করে। এর পর যখন বাঙালি এই চা খাওয়াতে অবস্থ হয়ে পরে। চা খাওয়া ছাড়া চলেই না নেশার মতো কাজ করে, ঠিক তখনি ব্রিটিশ রা চা ফ্রিতে দেয়া বন্ধ করে দেয়।

আর এটাই ছিলো তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা, ফ্রিতে খাওয়ানোর পর একটা কিছুর অভ্যস্ত হয়ে পরলে সেটা ছাড়া এতো সহজ নয়। ব্রিটিশ রা তখন তাই করলো ফ্রিতে চা খাওয়ানো বন্ধ করে দিলো। এখন চা খেতে হলে তাদের থেকে কিনে খেতে হবে। এখন বাঙালির তো অভস্ত্য হয়ে পরেছে চা খেয়ে। এখন তাদের এটা একবারে ছেড়ে দেয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে । তখন বাঙালি বাধ্য হয়ে চা কিনে খাওয়া শুরু করে। আর ব্রিটিশরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাফল্য অর্জন করে ফেলে। এইভাবেই আমাদের বাংলাদেশের মানুষের মাঝে চা খাওয়ার ঐতিহ্যটা এসেছে। আর সেই ঐতিহ্য এখন অব্দি আমাদের বাঙালির মাঝে থেকেই গেছে। যা হইতো এইভাবেই চলতে থাকবে। চা খাওয়া বাঙালির রক্তে মিশে গেছে যা চাইলেও ছাড়তে পারবে না এখন।

সেই চা খাওয়া এখন কোথায় নেয় গ্রাম থেকে শহর অলিতে-গলিতে। ছোট একটা দোকান আছে সেখানে আর কিছু থাক বা না থাক কিন্তু চা পাওয়া যাবেই। আমরা এখন সকল কাজের ব্যস্ততার পরে এক কাফ চা খেলে মন সতেজ হয়েছে বলে দাবি করে থাকি। আর করবোই না কেনো আমরা সারা দিন যেটাই করি সন্ধ্যা নামলেই টঙের দোকানে গিয়ে চা না খেলে আমাদের ভালোই লাগে না। আমরা বন্ধুরা সারা দিন ক্লাস করে আবার সন্ধার পর যখন পড়াশোনা শেষ করে একটু ফ্রি সময় পাই সবাই মিলে নিচে চলে যাই এক কাফ চা খেতে। আর চা থেকে এমন এক নেশা তৈরি হয়ে প্রতিদিন খেতে খেতে ঐ একই সময় না খেলে ভালোই লাগে না। এটা সবার মধ্যেই আপনা আপনি চলে আসে অভ্যাস টা। চাকরিজীবি যারা তারা সারা দিন কাজে ব্যস্ততার পর যখন বিকেলে বাসায় ফিরে তখন টঙের দোকানে বসে এক কাফ চা না খেলে তার মনের ক্লান্তি যেনো দূর হয় না।

IMG_20210907_233202-01.jpeg

এবার আসি গ্রামের টঙের দোকানে যা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য বলাই যেতে পারে। সারা দিন গ্রামের ছোট থেকে শুরু করে বয়স্ক মুরুব্বিরা অব্দি কাজ করার পর, বিকেল বেলায় টঙের দোকানে গিয়ে চা না খেলে চলেই না। যারা সারা দিন কাজ করে যে যেই কাজই করোক না কেনাও বিকেল ঘনিয়ে আসলেই তাদের সবার দেখা মিলে সেই ছোট্ট টঙের দোকানে। এক কাফ চা খাচ্ছেন আর শুরু করে দিয়েছে গল্প। গল্প বলতে তারা ছোটখাটো গল্প না। এমন গল্প শুরু করে তারা দেশের কি হচ্ছে না হচ্ছে। দেশের কোথায় কি হচ্ছে এ সব কিছু যদি আমরা খবরে না দেখে টঙের দোকানে গিয়ে বসি তাহলে দেশের সকল খবরাখবর পেয়ে যাবো। শুধু দেশের খবর নিয়েই তারা পরে থাকে না গ্রামের কে কি করছে কে কোথায় যাচ্ছে কে ভালো কাজ করলো, কে খারাপ কাজ করলো সব কিছু আমরা টঙের দোকানে গেলেই শুনতে পারি। গ্রামের এই ঐতিহ্য টা আমাদের দেশের সকল পান্তেই বিদ্যমান রয়েছে।

এই হলো আমাদের দেশের চা খাওয়ার গল্প। এই গল্প বলতে চাইলে আরো অনেক যা বলতে বলতে শেষ করার মতো নয়। তবে চা খাওয়ার অভ্যাস যেমন ভালো দিক আছে তেমনি এর খারাপ দিকও রয়েছে। আমরা সব সময় এর ভালো দিকটাই কাজে লাগাবো। সব কিছুর অতিরিক্ত কিছু ভালো নয়, সীমাবদ্ধতা থাকতে হয়।



0
0
0.000
1 comments