গ্রামের ধান কেনা বেচার হাট।
অনেক দিন পর গ্রামে এসেছি। দীর্ঘদিন যাবত গ্রামের হাটে যাওয়া হয় না। হঠাৎ আজকে সকালে আমার মা বলতেছে কিছু ধান আছে হাটে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমি তো এইসবের কিছু তেমন একটা বুঝি না। মা বললো সমস্যা নাই আমাদের গ্রামের পরিচিত একজন অটরিক্সা চালান তাকে বলে দিবে সেই বিক্রি করে দিবেন। আমিও ভাবলাম অনেক দিন হলো হাটে যাওয়া হয় না ঘুরে আসি। আজকে সকালে অনেক কষ্টে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ধান নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম। আমার অনেক ভালো লাগছিলো কারন এভাবে সকাল বেলা হাটে যাওয়ার আনন্দটা অনেক বেশি। যখন ছোট ছিলাম তখন বাবার সাথে অনেক চলে গিয়েছি। তখন বাবা নিয়ে যেতে না চাইলেও কান্নাকাটি করে হলেও গিয়েছি। কিন্তু এখন আমাকেই যেতে হয় বড় হয়ে গিয়েছি সবই করতে হবে।
যাইহোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম সেই ধান নিয়ে। সকালবেলার সুন্দর বাতাস, সুন্দর পরিবেশ সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছিলো। যাওয়ার রাস্তায় দেখলাম আমার মতো আরও অনেক লোকজন তাদের ধান নিয়ে হাটে যাচ্ছে। দেখে ভালোই লাগছিলো সকাল বেলা সবাই ব্যস্ত তাদের সারা বছরের কষ্টের ফসল বিক্রি করতে নিয়ে যেতে। এইভাবে সকালের আবহাওয়া অনুভব করতে করতে চলে গেলাম একদম হাটে। গিয়ে দেখি এতো মানুষ সবাই ধান বিক্রি করতে চলে এসেছেন। আমি গিয়ে দাড়াতেই দেখি কয়েক জন পাইকার যারা সবার ধান ক্রয় করেন তারা এগিয়ে আসলো। তারা লম্বা একটি চামিচের মতো দেখতে সেটা দিয়ে বস্থা থেকে ধান বের করে দেখছেন কেমন। দেখে দাম বললো কিন্তু কিছু কম বললো। আমার সাথে যে লোক গিয়েছে সে বললো আরও কিছু সময় দেখতে । এর পর একে একে কয়েক জন পাইকার দাম বললো। পরে যে বেশি বলেছে তার কাছে বিক্রি করতে বললো আমার সাথে যেই লোক নিয়ে গিয়েছি ওনি।
এর পর তার কাছে সব ধান বিক্রি করে দিলাম। এভাবে আমার মতো অনেক লোক যারা তাদের ধান বিক্রি করতেছেন। আজকের হাটে অনেক বেশি ধান বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছে সবাই। তার জন্যে অন্য দিনের তুলনায় আজকে একটু কম ছিলো ধানের দাম। আজকে এতো বেশি ধান বিক্রি করার কারন আমার কাছে মনে হলো সবারই এখন টাকার প্রয়োজন। কারন দ্রব্যমূলের দাম এতোটাই বেশি যে সবাই এখন সংসার চালাতে কষ্টে পরে যাচ্ছেন। সবারই এখন টাকার প্রয়োজন কারন গ্রামে যারা চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল তাদের কাছে তেমন একটা পুজি জমা থাকে না। যার জন্যে তাদের চাষাবাদের ফসল বিক্রি করেই তাদের সংসার চালান। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির ফলে এখন সবার টাকার প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে গিয়েছে।
প্রতি হাটেই মানুষ কম বেশি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের জমিয়ে রাখা ফসল বিক্রি করতে নিয়ে যান। এইবার প্রতিদিনের তুলনায় একটু বেশি ছিলো যার ফলে হাটে অনেক জমজমাট হয়ে উঠছিলো। দীর্ঘদিন পর হাটে গিয়ে অনেকটাই শান্তি লাগছিলো গ্রামের মানুষ গুলোর মুখে আনন্দ দেখে। যদি ঘুম থেকে একটু কষ্টের কথা ভেবে না উঠতাম তাহলে আমার হাটে যাওয়াও হতো না। আর সকালের এতো সুন্দর একটা পরিবেশ উপভোগ করাও হতো না। গ্রামের বাড়িতে এতো দিন পরে এসে গ্রামের এমন পরিবেশের সাথে যদি নাই মিশতে পারি তাহলে মনে আনন্দটা অপূর্ণ থেকে যেতো। সকাল থেকে এতো সুন্দর ভাবে দিনটা শুরু হওয়ায় সারা দিন অনেক ভালোও লাগছিলো। এভাবেই কেটে গেলো গ্রামে ছুটির একটি দিন।
যারা শহরে থাকে সারা বছর তাদের জন্য গ্রাম খুবই শান্তির একটি জায়গা।।
আসলেই ভাই। গ্রামে অনেক শান্তি।