আঞ্চলিকতার টান
আঞ্চলিকতা এ শব্দটি শোনার পর আপনার মাথায় কি আসে? এই শব্দটির যখনই শুনি তখন আমার মুখে মৃদু হাসি আর মাথায় কিছু পুরনো স্মৃতি আসে। হাসির পেছনে কারণ এবং স্মৃতিগুলো চলেন বলা যাক। আসতে সত্য বলতে গেলে পুরনো সে স্মৃতিগুলোর সাথে মৃদু হাসির কারণ খুবই নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আচ্ছা স্মৃতিগুলোই তবে এক এক করে বলা যাক।
আমার এখনো মনে আছে আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম স্কুলে ভর্তি হবো এমন অবস্থা তখন আমরা সপরিবারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট সরকারী কোয়াটারে থাকতাম যেহেতু আমার বাবা একজন সেনাকর্মকর্তা ছিলেন। এর আগের কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই, সে সূত্রে আমার প্রথম স্কুল জীবনের শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে। অবশ্য সেখানে আমার পড়াশোনার সময় তেমন দীর্ঘ হয়নি। মাত্র এক বছরের মাথায়ই আমার বাবার পোস্টিং হয় টাঙ্গাইল শহরের ঘাটাইল উপজেলার ক্যান্টনমেন্টে। আর আমাদের চলে যেতে হয় যশোর থেকে ঘাটাইলে, এক নতুন স্থানে।
পোস্টিংটা হয়েছিল একদম হঠাৎ, আগে থেকে কোনো জানা ছিলো না, সময়ও তেমন ছিলো না, দু'দিনের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে আমাদের চলে যেতে হয় এক নতুন স্থানে। যশোরের আঞ্চলিক ভাষা, বইয়ের কথ্য ভাষার সাথে খুব মিল। তাই বইয়ের ভাষা আর আমার নিত্যদিনের শব্দ উচ্চারণ প্রায় একই ছিলো। হঠাৎ পোস্টিং হওয়ার কারনে আমরা আর ক্যান্টনমেন্টের সরকারী কোয়াটারে কোনো বাসা না পেয়ে, ক্যান্টনমেন্টের বাইরেই একটি বাসা আমাদের ভাড়া নিতে হলো।
সেখানে গিয়ে মানুষের তাদের মুখের ভাষা আমি বুঝতেই পারতেছিলাম না। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো, মানুষ এভাবে কথা বলে কেন? আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম, বাবা বলল,"এটাই আঞ্চলিকতা, এটাই আঞ্চলিক ভাষা।" একেক জায়গায় একেক ভাষা। মানুষ সবাই বইয়ের ভাষায় কথা বললে কি হতো? তাহলেই ত আমাদের এত দ্বিধাদ্বন্দে পড়তে হতো না, সবাই খুবই সহজে বুঝতে পারত একে আপরের কথা।
আঞ্চলিকতার মাঝে থাকে একেক এলাকার কৃষ্টি-সংস্কৃতি পরিচয়। আন্ধলিক ভাষায় থাকে সেসব এলাকার মানুষের আবেগ, ভালোবাসা মিশ্রিত বাণী যা বইয়ের কথ্য ভাষায় মিলা সম্ভব নয়।
যেহেতু আমি সেস্থানে নতুন এবং আমি তাদের ভাষা মোটেও বুঝতাম না তাই আমি সেখানকার আমার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে মিশতে চাইলেও মিশতে পারতাম না কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে পারতাম না। কিন্তু তারা আমাকে নতুন হিসেবে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতো, তাদের সাথে খেলায় নিতো, যদিও আমি তাদের কথা বুঝতাম না যদি আমাকে তারা কিছু জিজ্ঞাসা করতো আমি না বুঝেই হ্যাঁ, হ্যাঁ করতাম।
আমরা যে বাড়িতে ভাড়া উঠি সে বাড়ির বাডিওয়ালার একটা ছেলে ছিল, নাম তার ছিল আল-আমিন। অনেক বড় আমার থেকে বয়সে, তখনই উনি ক্লাস সেভেনে পড়তেন। উনাদের বাড়িতে উঠার প্রথমদিন থেকেই উনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন, উনার সাথে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন, আমার খুবই ভালো লাগতো। একদিন তারা সব কাজিনরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা তাদের কলাগাছের বাগান থেকে কিছু কলাগাছ কেটে তা দিয়ে ভেলা বানিয়ে বর্ষায় যে পানি বেড়েছে আশেপাশে সেখানে ভেলায় চড়ে সবাই মিলে ঘুরবে।
আমি ভাইকে বললাম, "ভাই, আমাকে একটা ভেলা বানিয়ে দিবেন?" উনি নির্দ্বিধায় সাথে সাথে বলে উঠলেন, "দেইরো।" এর মানে উনি বানিয়ে দিবেন। দেইরো মানে হলো দিবো নে। তখন ধীরে ধীরে তাদের সাথে মিশতে মিশতে তাদের একজন হয়ে তাদের সে দুর্বোধ ভাষাগুলো আমি বুঝতে শুরু করি। আহা! এ শব্দটি শুনে আমি যেন অন্তরে আত্মতৃপ্তি খুঁজে পেলাম।
যাইহোক বড় হয়ে, এবছরের শুরুর দিকে এক বন্ধুর সাথে ট্রুর দেই সিলেট সাদা পাথরের উদ্দেশ্যে, সেখানে সিলেট শহরে বাসে করে গিয়ে বাস থেকে আমরা দুইজন নেমে পড়ে যাই এক সমস্যার মধ্যে তা হলো সিএনজি ঠিক করতে গিয়ে ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে গিয়ে তাদের কথা একেবারে বুঝতেই পারতেছিলাম না, না বুঝে কয়েকটা সিএনজি আমাদের পরিবর্তন করা লাগছিলো। মাঝে মাঝে ত কিছু না বুঝতে পেরে আমি এবং আমার বব্ধু দুই জনেই হেসে ফেলতাম। এ হাসি কোনো উপহাসের নয়, এ হাসি হলো কিছু না বুঝতে পেরে অসহায়ত্বের হাসি।
আঞ্চলিকতা আমাদের জীবনের একটি অনবদ্য অংশ। কেউ এর বাইরে নয়।আমারো আপনার মতো একজায়গায় থাকা হয় নি সব সময়।তাই আমার মধ্যে অনেক রকম ভাষার বিদ্যমান। যশোরের ভাষা সবাই বোঝে। ্ ্্আ্্আ্্আ্্
আঞ্চলিকতাই একটি অঞ্চলের সৌন্দর্য, এক অঞ্চলকে নতুনরুপে অন্য অঞ্চলের সামনে উপস্থাপন করে, এতে লজ্জার কিছু নেই, বাংলাদেশের মতো ছোট্র একটি দেশের মধ্যে বহু আঞ্চলিকতা থাকার কারনে এটি আমাদের দেশের একটি অনন্য সৌন্দর্য।
Hi @riazud, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON