হুইসেল
আমি ট্রেনের রাস্তায় হাঁটতে ভীষণ পছন্দ করি। আমি আর আমার বোন প্রতিদিনই বিছানায় শুয়ে ভোর তিনটায় যাওয়া ট্রেনের আরামদায়ক হুইসেল অনুভব করতাম। আমাদের বাবা একটি শিপিং ট্রেনের কন্ডাক্টর ছিলেন। যেটা আমরা দেখছিলাম এটা তাড়াতাড়ি দৌড়ে চলে ছিল। প্রতিদিনই আমি ভাবতাম হুইসেল শুনে, হয়তো এটা আমাদের বাবার ট্রেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুখের দিন পরিবর্তন হলো। আমার বোনকে ট্র্যাকগুলি থেকে একটি পাহাড়ের উপরে দাফন করা হয়েছিল। আমি নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করি। এখন কি হবে? আমি কি আবারও কখনো সেই সুখের দিনে ফিরে যেতে পারবো? নাকি এই বিষন্নতা আমার আত্মার উপর চেপে বসেছে?
আমি আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া আমি কিভাবে নিজের জীবনকে পরিচালনা করব। আমি অনুভব করছিলাম আমি আমার অর্ধেক হারিয়ে ফেলেছি। জীবনের ক্ষতির কালো গহ্বর আমার জীবনের অর্থ চুষে নিয়েছিল। আমি পাহাড়ের দিকে তাকালেই আমার বোনের সেই মায়াবী মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। না চাইতেও আমার গাল বেয়ে চোখের জল পরতো। আমি সেদিন আমার চোখের জল মুছে নিয়েছিলাম এবং নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম আমার এখন কি করা উচিত? ভেতর থেকে কেউ মৃদু কন্ঠে বলে উঠেছিল, আপনি আলোর পথ অনুসরণ করুন। আমি নিজের ভেতর পুরনো সান্তনার একটি বাঁশির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। এটি আমার বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে ছিল ।
কিন্তু এটা আমার এখানে তার চেয়ে জোড়ে ছিল। কম্পন আমার ভেতরের আত্মাকে ভাঙতে শুরু করেছিল। আমি চেচিয়ে উঠে ছিলাম। কিন্তু স্পার্ক ট্র্যাক জুড়ে উড়ে আসা আলো আমাকে আলিঙ্গন করতে শুরু করেছিল। ভোর চারটার দিকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন কেউ কম্পিউটার ল্যাবে হেঁটে যাওয়ার সাথে সাথে কিছু বলে যাচ্ছিলেন। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস করিনি। আমার পাশে থাকা বন্ধু আমায় বলে উঠছিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে আমাদের এখানের একজন ট্রেনে ধাক্কা খেয়েছিল। তার চোখ কম্পিউটার স্ক্রিনে চলমান কোডের উপর তালাবদ্ধ ছিল। আরও বলল সে সেখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ট্রেনের কন্ডাক্টর সময়মতো সেটা থামাতে পারেনি।
আমার কাছে ভীষণ অদ্ভুত লেগেছিল, তাই আমি নিজের চেয়ার ঘুরিয়ে তার পাশে বসলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম সেইসময় সর্তকতা কি আপনাকে জাগিয়েছিল? আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা আমার কাছে একটি অদ্ভুত অংশ লেগেছিল। আমাদের এখানে ঘটনাটি ঘটার পর মিডিয়াতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল।যখন ইতিমধ্যেই সংবাদটি চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল। আমি তখন লক্ষ্য করেছি প্যারামিটারের বাইরে অনলাইন দুনিয়ায় উল্লেখ করার জন্য এবং পরীক্ষা গোষ্ঠীর লোকদের নাম পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের কাছে একটি এলগরিদম পাঠানো হয়েছে। আমি আমার বন্ধুকে বলেছিলাম ট্রেনের ধাক্কা খেয়ে একজন মারা যাওয়া এটা ভীষণ অস্বাভাবিক। সেখানে কি তারা সমাপ্তির কোন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল? তিনি মাথা নাড়িয়ে আমাকে না করলেন এবং বললেন এই জন্যই আমি আপনাকে সব কিছু বলছি।
আমরা সবাই মিলে খবরের কাগজ থেকে ছোট ছোট টুকরো সংগ্রহ করেছিলাম, যেখানে সাধারণত ট্রেনের কিছু অদ্ভুত দুর্ঘটনার কথা বলা ছিল। আমার মনে হয় বরাবরই প্রশ্ন আসতো মানুষ কেন এই পথটি বেছে নেয়। প্রায় দীর্ঘ বছর ধরেই এই রেলপথটিতে রহস্যজনকভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সবাই সবকিছু বুঝতে পারছিল কিন্তু কেউই কথা বলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। একটা ঘটনায় হয়তো মাত্র এক সপ্তাহ সেটা নিয়ে আলোচনা অথবা সমালোচনা হয়। কিন্তু তারপরের সপ্তাহতেই মানুষ সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে চলতে শুরু করে। কয়েক বছর ধরে এভাবেই পুনরাবৃত্তি ঘটছে এক একটি অসম্পূর্ণ মৃত্যুর। আমি কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে দেখতে পেরেছি যখন রাত তিনটার দিকে ট্রেনটি হুইসেল দিয়ে যেতে শুরু করে তখনই মানুষ তার পিছনে ছুটে। তাদের ছুটে যাওয়া দেখলে এমন মনে হয় তখন তারা নেশাগ্রস্ত থাকে। সেটা কোনভাবেই মদ্যপানের নেশা নয়। তারা মৃত্যুর নেশায় ছুটে যায়।
Congratulations @shahinaubl! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!