একজন আদর্শবান শিক্ষক এর শেষ পরিণতি

avatar

v4-460px-Be-a-Good-Teacher-Step-17-Version-5.jpg.jfif
Image source
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন।আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব আমার জীবনে দেখা একজন আদর্শবান শিক্ষক এর শেষ পরিণতি.আমি সবেমাত্র ক্লাসের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি.সবার মত আমিও ক্লাসে হাজির হয়েছি.আমি যে শিক্ষকের কাহিনীটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব তিনি বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন.আমি স্টুডেন্ট হিসেবে খুব একটা ভালো ছিলাম না.ক্লাসে শিক্ষক যখন সবার পড়া ধরত আমি তখন নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম.অন্য স্যারদের চোখ এড়িয়ে চলতে পারলেও বাংলা বিষয়ের শিক্ষক মকবুল স্যারের চোখ এড়িয়ে যেতে পারতাম না.কারণ হলো উনি ক্লাসের সবার পিছন থেকে পড়া ধরা শুরু করতেন.

ক্লাসের অন্য শিক্ষকদের পড়া তৈরি করতে না পারলেও আমি চেষ্টা করতাম মকবুল স্যারের বিষয় যথাযথভাবে তৈরি করে নিয়ে যাওয়ার.শিক্ষক হিসেবে উনি ছিলেন একজন গম্ভীর প্রকৃতির লোক.উনার চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় উনি সবসময় রেগে আছে এজন্য পড়া তৈরি থাকা সত্ত্বেও উনার সামনে বলতে গেলে পড়াটা এলোমেলো হয়ে যেত.প্রতিদিনের মতো সেদিনও উনি ক্লাসের পিছন দিক থেকে পড়া আরম্ভ করলেন.উনি ক্লাসের পড়া ধরতে ধরতে যখন আমার কাছে এগিয়ে আসছে আমার বুকের ভিতর যেন ধুক ধুক করে ভয় বেরিয়ে চলছে.

যাহোক নিয়ে আমাকে পড়া ধরলেন.আমি উনার পড়া সম্পূর্ণটা বলতে পারলাম না.উনি আমার কানটা ধরে উনার টেবিলের সামনে নিয়ে গেলেন.ক্লাসের সব বন্ধুদের সামনে যখন উনি আমার কানটা ধরে উনার টেবিলের সামনে নিয়ে গেলেন তখন নিজেকে খুবই লজ্জিত মনে হচ্ছিল.উনি আমাকে বললেন তুমি তোমার কান ধরে পড়তে থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত পড়া তৈরি করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে থেকে চেষ্টা করতে থাকো.আমি সেদিন অনেক কষ্টে পড়া তৈরি করে উনার হাত থেকে রক্ষা পায় এবং মনে মনে উনার প্রতি আমার অনেক ঘৃণা জন্ম নেয়.আমি সেদিন রাত্রে সত্যি ঘুমাতে পারিনি.

আজ আমি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে একটি ভালো পোস্টে চাকরি করি.আমার সেই শিক্ষক আজও বেঁচে আছে.আজ তার প্রতি আমার কোন অভিমান নেই কারণ এখন আমি বুঝতে পারি .আমি এখন বুঝতে পারি উনি যেটা করেছেন সেটা আমাদের সবার ভালোর জন্য করেছেন.স্যার সারাজীবন সবার জন্য করেছেন কিন্তু উনি উনার জীবনের শেষ পরিনতি এমনটা হবে উনি কখনো ভাবতেও পারেনি.

অনার তিনটি সন্তান.তার মধ্যে দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে.শিক্ষক আমাদের যেরকম শিক্ষার জন্য কঠোর ছিলেন উনি ওনার নিজের সন্তানের ক্ষেত্র ঠিক একই রকম কঠোর ছিলেন .উনি ওনার নিজের সন্তান এবং আমাদের মধ্যে কখনো তফাৎ করেননি.আজ ওনার প্রতিটি সন্তান অনেক প্রতিষ্ঠিত.উনি ওনার মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পরে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সঙ্গে বিবাহ দিয়েছেন.

অনার একটি ছেলে আজ আমেরিকাতে থাকেন.অন্য একটি ছেলে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকে কর্মরত আছেন.কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এটা যে উনি উনার সন্তানদেরকে মানুষ করেছেন কিন্তু আজ তারা তাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না.যে সন্তান মানুষ করতে গিয়ে উনি ওনার পেনশনের টাকা.জায়গা-জমি যা ছিল সবই উনি শেষ করেছেন

আধুনিক বৃদ্ধাশ্রম এর একজন বাসিন্দা.ওনার স্ত্রী অনেক আগেই ওনাকে ছেড়ে চলে গেছেন.এখন আমি বাড়িতে আছি আসার পরে যখন উনার এই পরিণতি আমি দেখতে পাই তখন সত্যিই খুবই খারাপ লাগে.পুরো বিষয়টা যখন আমি জানতে পারি তখন সত্যিই একটা
বিষয় আমার বারবার মনে পড়ে.কেন এমনটা হল ভালো মনের একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আজ কেন উনি বিদ্বাশ্রমের একজন বাসিন্দা.

বাড়িতে আসার পর আমি জানতে পারলাম যে উনার মেয়েও কোন খোঁজ খবর রাখেন না.উনার দুঃখের কাহিনী যখন সবাই জানতে পারে তখন সবার মধ্যে একমাত্র আফসোস করা ছাড়া কিছুই থাকে না.সবার মত আমারও অনেক খারাপ লাগে এই জন্য আমি উনারে জীবন কাহিনীটি এই প্লাটফর্মে আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম আশা করছি সবাই গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন.

আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন এমন সন্তান অন্য কারো ঘরে যেন জন্ম না দেই.যে সন্তান বড় হওয়ার পর তার নিজের পিতা-মাতাকে ভুলে যাই এমন সন্তান থাকার থেকে না থাকাই ভালো
সবাই ভাল থাকবেন আর সবাই মন থেকে দোয়া করবেন আমার এই শিক্ষক যেন ভাল থাকেন সুস্থ থাকেন.এটা কোন গল্প নয় এটা একটি বাস্তব ঘটনা.



0
0
0.000
0 comments