Movie review segment: বুলবুল (২০২০)

avatar

সাধারণত আমি খুব মুভি পাগল একজন। প্রত্যেকবার মুভি দেখে চেষ্টা করি তার সাথে গল্পটির গভিরতা বুঝতে । সেরকমই সাম্প্রতিক কালের খুব জনপ্রিয় একটি মুভি নিয়ে আজ আমার লিখতে বসা। টাইটেল দেখে বুঝে যাবেন আজ কি নিয়ে লিখব।

bulbul-review-759.jpg
Source

বুলবুল নামের একটি নেপালিস মুভি দেখেছিলাম ২০১৯ সালে , সেই মুভিটির নামে মিল রেখে বলিউডের ২০২০ সালের একটি নতুন ধাঁচের মুভি আসে যেখানে বাংলা সাহিত্যের গল্প খুঁজে পাবেন। বুলবুল মুভিটি দেখেননি খুব কম মানুষ আছে। এই কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের জন্য অন্যান্য বারের মত হলে না হয়ে বরং এটি নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তি পাওয়া বুলবুল একটি ডাইনির গল্পের ভিতর নিয়ে এসেছে একটি নারীর প্রতিবাদী রুপ। ব্যক্তিগতভাবে আমার বুলবুল চরিত্রটি ভাল লেগেছে অনেক। এখানে আরও কয়েকটি প্রধান চরিত্র আছে যার মধ্যে আছে বিনোদনী। এই চরিত্রটি আপনি কখনই অপছন্দ করতে পারবেন না। এই একটি চরিত্র যা আমাদের সমাজ ব্যবাস্থার বড় একটা অংশ বহন করে। আমার মনে পরে স্কুল কলেজের বাংলা বইতে পরেছিলাম – “ নারীরাই নারীদের বড় অন্তরায়" - বিনোদনী এই কথাটার একটা প্রতিফলন বলতে পারেন। তাছারা সমাজে বেড়ে ওঠা পুরুষতান্ত্রিক বা নারী পুরুষের মধ্যে বৈসম্য অনেক গুছিয়ে দেখানো হয়েছে ছবিটিতে।

গল্পের শুরুতে একটা ছোট মেয়েকে দেখানো হয় আলতা পায়ে বউ সেজে আম গাছের ডালে বসে আছে। যদিও আজ তার বিয়ে ঠিক তার থেকে তিন গুন বড় ইন্দ্রনীলের সাথে । বিয়ের পিড়িতে বসার আগে বুলবুলএর পিসি বুলবুলের পায়ের আঙ্গুলে একটি আংটি পড়িয়ে দেয় আর বলে এটা পরানো হয় যাতে করে একটা মেয়ে বশে থাকে । যাই হক মেয়েটির বিয়ে হয় আর বিয়ে হয়ে মেয়েটা যখন পালকিতে চড়ে শশুরবাড়ি যায় তখন সত্য, যে কিনা ইন্দ্রনীলের সব থেকে ছোট ভাই মেয়েটিকে ডায়নির গল্প শুনায় এবং তারা খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় । গল্পে দেখা যায় তারা দুজনই ভূতুড়ে বিষয় নিয়ে গল্প করতো আর এভাবেই হেসে খেলে বড় হয় দুজন। দুজন বেড়ে ওঠা আর চিন্তা চেতনার মিল থাকায় তাদের নিয়ে কটু কথা বা বলতে পারেন কান ভারি করে বিনোদিনী তার ঠাকুরমশাই ইন্দ্রনীলকে আর তখন থেকেই সন্দেহের বাসা বাধে তার মনে, যার রেশ ধরেই সত্যকে পাঠান বিদেশে পড়াশোনার সুবাদে। ব্যপারটি মেনে নিতে পারেনি বুলবুল। অনেক কান্না দুঃখ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সত্য এর জন্য। মনের দুঃখে ছিড়ে পুড়িয়ে ফেলে তার ডায়রি কিন্তু রেহাই পায় নি নির্যাতন থেকে। তারপর থেকে অবশ্য আমরা পুরুষ নির্যাতন এর একটা বড় অংশ দেখতে পাই । যদিও ইন্দ্রনীল এর সাথে বিনোদিনীর একটি পরকীয়া ছিল। কিন্তু সেটি কোন ব্যাপার ছিল না কারোর কাছে।

f558795edec2ee821db533724832092e.jpg
pinterest

গল্পের মাঝে দেখা যায় ইন্দ্রনীল লোহার রড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে বুলবুলের পা। সেই দৃশ্য আসলেই ভয়ানক। তারপর আপনার গাঁ শিউরে উঠবে যখন দেখবেন সেই ক্ষত বিক্ষত ও ব্যাথায় পরে থাকা বুলবুলকে তারই মদপ্য দেবর যখন রেপ করে। সব বুঝেও বিনোদিনী বুলবুলকে চুপ হয়ে থাকতে বলে কারন একটাই বংশের মান রক্ষা করা। এখানেও আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা দেখতে পারি। যেখানে একটা মেয়েকে বলা হয় সহ্য করতে, শেখানো হয় চুপ করে থাকতে তার সম্মান রক্ষার দোহায় দিয়ে ।

এসব না জানা সত্য ফিরে আসে তিন বছর পরে। সে দেখতে পারে বুলবুলের আচার আচরণের পার্থক্য। এখানে আরেকটি চরিত্র এর আবির্ভাব হয়- সুদিপ- যিনি হলেন এখানে বুলবুলের চিকিৎসা করেন কিন্তু সত্য ভেবে নেয় তাদের মধ্য একটা সম্পর্ক গড়েছে। তার জন্য অবশ্য পরে বুলবুল কে সরাসরি বলে কিভাবে স্বামী থাকা অবস্থায় আরেকটা সম্পর্কে জড়ায়, যার প্রতিউত্তরে বুলবুল বলে “তোমরা সবাই এক “ । কথাটা অনেক টাচ করে আমাকে । অবশ্য এটা নিয়ে আমি লিখার শেষে কিছু লিখেছি।
যাই হক মুভিতে ডাইনি শব্দটি খুব বেশি প্রাধান্য পেয়েছে যেখানে দেখান হয় কিভাবে মানুষ মারা যায় ডাইনির হাতে। এখানে বিনোদিনীও বিধবা হয় আর সে বিশ্বাস করে তার স্বামীকে মেরে ফেলে সেই ডাইনি । কথাটি মেনে নিতে নারাজ সত্য তাই সে শুরু করে ইনভেজটিগেশ্ন। কিন্তু তার মাঝেও দেখা যায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকে । পরে সন্দেহের ভিত্তিতে সুদিপকে আটক করে সত্য । মাঝপথে তাঁদের গাড়ি চালকের মৃত্যু হয়। গাড়ী থেকে নেমে সত্য গুলি চালায় ডাইনির গায়ে পরে ডাইনিকে খুঁজে না পেয়ে চলে যায় জঙ্গলে আর এর মাঝে সুদিপ গাছের উপর দেখতে পায় বুলবুলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। পরে অবশ্য সত্যকে আটকাতে পারে নি সুদিপ । সত্যের দেওয়া আগুনে পুরু জঙ্গল পুড়ে যায় সেই সাথে বুলবুল। পরে সত্য বুঝতে পারে সে কি ভুল করেছিলো সেদিন । কিন্তু গল্প শেষ হয়নি তখনও , অনেক বছর পর ফেরত আসা ইন্দ্রনীলকে শেষ করেই গল্পের শেষ হইয়। যেখানে দেখানো হয় বুলবুল আসলে দেবীতে পরিণত হয় সেই অসহ নির্যাতনের রাত থেকে। তার ফলশ্রুতিতে নারীদের উপর নির্যাতন করা পুরুষদের হত্যা করে নারীবাদীর একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।

মুভিটা দেখে আমাার অযাচিত মনেই ভাবনা আসে , আসলে একটা মেয়ের জন্য সমাজ কতটা কঠিন আর তার থেকেও বড় ব্যাপার হল একটা মেয়ে কখনও বুঝতে পারবে না তার জীবনসঙ্গী কেমন হবে! তার চিন্তাধারা কেমন হবে! , যদিও বা তাকে আপনি ভালবাসুন না কেন ! প্রতিনিয়ত ভাবতে হয়, সে মানুষটা মেয়েটির গায়ে হাত তুলবে না তো? মেয়েটিকে আর সবার সামনে ছোট করবে না তো ? আর যদি করেও তাহলেই বা কি করার আছে সেই মেয়েটির ? একটা মেয়ে আসলে কখনোই জানে নি আর জানতেও পারে নি !...



0
0
0.000
8 comments
avatar

Congratulations @xaibxiba! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You received more than 100 upvotes. Your next target is to reach 200 upvotes.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
0
0
0.000
avatar

অনেকেই বারবার করে দেখতে বলতেসে। খুবই সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছ। you have so much potential.. Try to engage a little more and youll be a perfect fit here.:)

0
0
0.000
avatar

thank you so much for inspiring me :)

0
0
0.000
avatar

Hey Xiba:) im always there if you need something

https://hive.blog/hive-190212/@bdcommunity/bdcommunity-writing-contest-week-5

This is a contest i think you should try out. This weeks topic is travel.. Check out posts made by the previous winners, try to get the gist and write something good. I think you have a great chance at winning :) bengali or english, you can choose :)

0
0
0.000
avatar

of course i will participate on this contest .

0
0
0.000
avatar

নিঃসন্দহে মুভিটাতে সুন্দর একটি গল্প বলার চেষ্ঠা করা হয়েছে আমাদের পূর্ববর্তী সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে। বর্তমানের চেহরাটা একটু আলাদা। আপনার উপন্থাপনা খুব ভালো। আপনি যদি আসামী মুভি আমিষ দেখে থাকেন তার উপর একটা রিভিউ করতে পারেন, চমৎকার একটি গল্প।

0
0
0.000
avatar

thank you brother .. in sha Allah i will try

0
0
0.000