অহংকার
জীবনে এই এক প্রকার ব্যক্তির সাথেই আমার সম্পর্ক টিকে থাকেনি । ছোটবেলা হইতেই বন্ধুপ্রিয় একটা ছেলে আমি। এলাকায় যেখানেই আড্ডা, ঘুড়াঘুড়ি, হইচই যেটাই বলেন সেখানেই আমি। দিনশেষে নতুন মুখের সাথে পরিচয় হলেও, খাতির জমলেও লিষ্টের কিছু পুরোতন অহংকারী বন্ধু, বড়ভাই কিংবা যেকোনো স্তরের মানুষের সাথে দিনকেদিন সম্পর্কের পিছুটান হয়।
একজনের ঘটনা দিয়ে বর্ণনা দিতে চাই, আমাদের পাড়ার একটা ছেলে, নাম তার অনিক। ছোটবেলা যখন গ্রামে থাকতাম, একসাথে ব্রাকে পড়তাম, ক্লাস দ্বিতী, তৃতীয় । শুধু তাই নয়, ওর সাথে ছোটবেলায় দীর্ঘদিন পথচলা, একপ্রকার ভালো বন্ধু বলা যায় । ওর বাবা সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতো। পরিবারের সবাই উচ্চমর্যাদার। ধন-সম্পদ কিংবা টাকা পয়সার অভাব নাই তাদের। ছেলেকে কখনো সাইকেল, কখনো মোবাইল, যখন যেটা চাইতো সেটাই কিনে দিতো। অনিক আর আসিফ দুইভাই। যাই হোক, অনিক পাড়ার ছেলে একসাথে পড়েছি, আমি তাকে বন্ধু দাবি করতাম। তারপরের ঘটনা, সে চতুর্থ শ্রেণিতে বাহিরে ভর্তি হয়, অর্থাৎ শহরে চলে যায় ওরা সবাই। গ্রামে খুব কম আসে, বছরে ১ বার আসে শুধু ঈদ-উল-আজহায়। আর আমরা তো গ্রামেই থাকলাম। ঈদে মাঝেমাঝে আসতো। এসে কেমন জানি পরিবর্তন মনে হয় তাকে। বাড়ি থেকে কম বের হয়, আমাদের কারো সাথে মিশে না, কাউকে পাত্তাও দেয়না, কেমন জানি অনেক পরিবর্তন।
একদিন ওর বাড়িতে ডাকতে গেলাম আক্কেল খেটে, বাড়িতে গিয়ে ডাক দেই-
কিরে অনিক, বাড়িতে আছু? কথা বলিস না ক্যা? কি রে?
অনিকের আম্মু- এই ছেলে কে তুমি? এভাবে ডাকতিছো কেনো? অনিক বাড়িতে নাই, যাও।
উনার কথা শুনে নিজেকে একটু ছোট মনে হইলো, কেমন জানি রাগ মুখে আর ইগনোরেন্স দেখালো আমায়। আমি চলে আসলাম। ঈদের দিনে দেখা, অনিকের অপরদিকে নতুন নতুন অনেক বন্ধু হয়েছে এলাকায়, সবগুলো বন্ধুই ওর লেভেলের। সবাই টাকাওয়ালা পরিবারের ছেলেপেলে। ঈদের নামাজ শেষে দেখা, অনিক কে বললাম, কি রে বন্ধু? তোর কোনো খোজ খবরি নাই আজকাল, কি করিস কই থাকিস কিছুই জানিনা। সে আমাকে তুমি তুমি করে বলা শুরু করে, বলতিছে এইতো ভালো, তোমার কি অবস্থা।
আমি যায়গাতেই অবাক। মনে মনে বলতিছি যে, তুমি তুমি করে বলতিছে কেন? তখন ওর বড়বড় বন্ধুগুলো ওর সাথেই ছিলো। সবাই অনেক হাইফাই পোশাক আর গেটাপ নিয়ে আসছে, সেখানে আমি মাত্র পুরোতন একটা পাঞ্জাবি পড়ে। যাই হোক, পরে আমি বললাম এইতো ভালো রে। চল কোথাও বসি নয়তো ঘুরে বেড়াই। সে বললো তুমি যাও, তোমার সাথে বিকেলে দেখা হবে। আমি বললাম ওকে, আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম।
মনে মনে চিন্তা লাগে? অনিকের কি হয়েছে? এভাবে ইগনোর করতেছে কেনো আমাদের? পাড়াতে আড্ডা দেই আমরা সে আসেনা, আসলেও আমাদের সাথে মিশে কম। ওর ভিতর থেকে কথা বের করে নেওয়া লাগে কিংবা ওরে মাথায় তুলে নিয়ে আড্ডা দিতে পারলে তাহলে ঠিকঠাক।
_ আমি একটু কথা বেশি বলে আড্ডাতে জমাতে চাই, যেনো ভরপুর একটা মজা হয়। সে মাঝেমাঝে বলে উঠতো আমার নাকি কথাবার্তার ভিতরে কোনো ম্যানার নাই, কখন কি বলি ঠিক নাই। আমার নাকি পরিবর্তন হয়নি, আগের স্বভাবেই আছি। কথার ভিতরে মিনিটে মিনিটে ভুল বের করে সবার সামনে বলে আর হাসাহাসি করে। বিষয়গুলো তখন ঐভাবে ভাবিনি, আমিও ওদের সাথে হাসতাম। একদিন ওরা ঘুরতে যাবে সবাই, আমিও খবর পাই। বের হই ঘুরতে যাবো বলে, অনিক বললো আমরা তো ঘুরতে যাবোনা, এমনিই বাজারে যাবো। তুমি কই যাবা? আমি বললাম, তোরা নাকি ঘুরতে যাবি? সে আমাকে তাৎক্ষণিক উপেক্ষা করে ওর বন্ধুসহ আমাদের পাড়ার কয়েকজন ওরা বের হয়। আমি পাত্তা পেলাম না ওদের সাথে। যাই হোক, নিজেকে অনিকের কাছে বারবার ছোট মনে হতে লাগলো, ভিতরে কেমন জানি খারাপ লাগা কাজ করতো। এভাবে দিনকেদিন সে ইগনোর করে, পাত্তা দেয়না। একদিন ঠিক ঐভাবে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি আর অপমান করছিলো, আমি মুখের উপরে বলেছিলাম অনিক শোনো, তোমার বাবার টাকা পয়সা আছে, বাড়ি গাড়ি, দামি দামি পোশাক আছে, এজন্যই এভাবে বলো। তুমি নিজেকে খুব অহংকার করো। এতো অহংকার ভালো না।
তারপর থেকে সে অামার আমার সাথে কথা বলেনা, আমিও একদম বলিনা। এরপর থেকে ঠিক অনিকের মতো এমন কথায় কথায়, উঠতে বসতে ভুল ধরা কিছু ছেলেপেলের সাথে উঠাবসা ছিলো, তারাও মাঝেমাঝে এমন ভরা মানুষের ভিতরে অপমান,মজা, হাসিঠাট্টা করতো। নিজেকে খুব ছোট মনে হতো। আর এমন ভাব নিতো, যেনো তারা সকল কিছু জানে, তাদের উপরে আর কেউ কিছু জানে না। মনে করে খুব খারাপ লাগে তাদের এমন ব্যবহারে। শুরু হয় তাদের প্রতিও একটা অন্য নজরে তাকানোর প্রতিজ্ঞ। সময় পেলে ঠিকঠাক যায়গা মতো আমিও অপমান করবো। সময় পেয়ে যাই, আমিও দু একটা কথা বলি, আর সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
এখন আসল কথা হচ্ছে, আমরা আসলে অহংকার কিংবা মানুষ গুনে গুনে চলতে পারিনা। ছোটবেলা থেকেই সবার সাথেই মিশতে চেষ্টা করি, সবার সাথে মিশে চলতে ভালো লাগে। একটু ভালো কিংবা ব্যস্ত সময় কাটতো ভালো লাগতো। ভিতরে অহংকার কিংবা মানুষদের কাছে বড়হতে হবে এমন বিষয়গুলো কাজ করতো না। আর আমার নাকি কথার ম্যানার নাই, পোশাক আশাক ঠিক নাই, ক্ষেত ছেলে। এরপর শুধুমাত্র তাদের কে চিন্তা করে, নিজেকে পরিবর্তন করতে শুরু করি। নিজের গুনাগুন, কথাবার্তা, পোশাক, সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছক খুজতে থাকি। খুব ইচ্ছা, তারা আমাকে পাত্তা দেয়না, একসময় আমিও তাদের কে দেখিয়ে দিবো। হ্যা, কথাবার্তা সর্টকার্ট করে ফেলি, কথাবার্তায় ম্যানার নিয়ে আসি। পোশাক ঠিকটাক দামি পড়ি, ওদের কে এড়িয়ে চলি এবং উপজেলায় একটা বড়ভাইয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছিলো উনার সাথে সময় দেই, হালকা পাতলা রাজনীতি শুরু করি, আর দিনকে দিন নতুন নতুন বন্ধু হয়, নিজেকে ব্যাস্ত করে ফেলি আর নিজেকে গুছিয়ে নেই। এভাবেই নিজেকে অনেক পরিবর্তন করে বড় করেছি। কিন্তু সবশেষে ঐ অনিক কিংবা তার বন্ধুদের মতো স্বভাব নাই আমার, আমি সবার সাথেই মিশে চলি, সবাইকে এক চোখেই দেখার চেষ্টা করি, কোনো প্রকার অহংকার মুক্ত ভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। এখন ইনশাআল্লাহ অনিক এবং ওর বন্ধুসহ তাদের স্তরের সকল পোলাপান বড়ভাই সবাই প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ডাকে। কাছে টানে।
আসলে এভাবে অপমান আর হাসির পাত্র না বানিয়ে পরিবর্তন না করালেও পারতো। তবে হ্যা, এখন আল্লাহর রহমত সবাইকে নিজ নিজ যায়গা থেকে বুঝার একটা তৌফিক দান করেছেন, এছাড়াও অহংকার বিহীন সম্পর্ক তৈরী এবং টিকিয়ে রাখার একটা জ্ঞান আল্লাহ দান করেছেন। যাই হোক, আসলে অহংকার এবং লোভী ব্যক্তিদের বিধাতা নিজেও ক্ষমা করেন না। অহংকারের মতো শত্রু নেই। এই দুনিয়াটা অনেক কমপ্লেক্স করে ফেলছে এই ধরনের মানুষেরা। এরা নিজের যোগ্যতা নিয়ে অহংকার করে, মানুষকে অবহেলা আর ছোট করে দেখে। আসলে পৃথিবীতে অহংকারীদের পতন অনিবার্য। এদের কারণেই আসলে ধনি গরীবের বিভেদের সৃষ্টি, এদের কারণেই সমাজে আজ এগিয়ে যাওয়ার এক অমানবিক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি, একে অপরের প্রতি হিংসাত্মক মনেভাবের সৃষ্টি। এরা আর যাই হোক, আমার বিপরীত এবং শত্রু সমতুল্য।
(Pic collected from google)
0
0
0.000
1 !BEER Token for you
Sorry, you don't have enough staked BEER in your account. You need 24 BEER in your virtual fridge to give some of your BEER to others. To view or trade BEER go to hive-engine.com
দারুণ লিখেছেন। অহংকার আল্লাহ্ তায়ালার ভূষন। অহংকারীকে আল্লাহ্ বরদাস্ত করেন না। অহংকারের পতন অনস্বীকার্য। এই ছোট্ট বয়সে বহু অহংকারীদের পতন দেখেছি।
আর থাকলো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের যদি ভাষায় বিশ্লেষন কথা যায় তাহলে তুই তোকারী ভাষাটাই আমার কাছে সব থেকে বেশি সুন্দর বলে মনে হয়। এই ভাষাতে কেমন যেন একটা অধিকার প্রকাশ পায়।
তবে একটা কথা বলতে চাই। প্রতিশোধ পরায়ন হওয়া যাবে না। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
প্রতিশোধ পরায়ন চিন্তা করলে সেই কবে কি করতাম। সবাইকে নিজের মতো বাচঁতে দেখতে ভালোলাগে।
অবশ্যই
Congratulations @yeakub50! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
Hi @yeakub50, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @simplifylife!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON