বছরের সবচেয়ে মজার সময় ( শীতকালীন ছুটি)

avatar

কি অবস্থা সবার?

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এখন করোনার কারনে দেশে খুব খারাপ পরিস্থিতি যাচ্ছে। আশা করি সবাই আল্লাহ্ এর রহমতে নিজেদেরকে নিরাপদে রাখতে পেরেছেন।

শীতকাল এসে পরেছে। আমার সবচেয়ে পছন্দের ঋতু এটি। আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ, মজা, খাওয়া-দাওয়া হয় শীতকালে। সারা বছরের সৌন্দর্য থাকে এক রকম আর শীতকালের সৌন্দর্য থাকে আরেক রকম। প্রকৃতিতে অনেক কিছুর পরিবর্তন ও ঘটে।

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। কিন্তু আমরা সচরাচর দুটি ঋতুই মনে করি। আমাদের কাছে মনে হয় যেন বছরের একটি সময় গরম এবং আরেকটি সময় ঠান্ডা। শীতকালটা যখন আসে তখন আনন্দে মনটা ভরে উঠে। তাই প্রতি বছর এই সময়টির জন্য আমি অপেক্ষা করি।

হেমন্তকালের সৌন্দর্যটা অন্য রকম। এই সময় ধান পাকে। কৃষকরা সেই ধান কেটে ফসল ঘরে তোলে। সারা মৌসুমে অনেক কষ্টের পর যখন কৃষকরা ধানের সেই সোনালি রঙের সৌন্দর্যটি দেখতে পায় তখন তাদের মনটি আনন্দে ভরে উঠে। তাই এই সময় নবান্ন উৎসব হয়। হেমন্তের শেষেই হালকা ঠান্ডা পরতে শুরু করে। চলে আসে শীতকাল। কৃষকরা তাদের ফসল বিক্রি করে যে টাকা পায় সেটি দিয়ে তাদের পরিবারের জন্য শীতের কাপর কিনতে পারে। তাই সময়টি তাদের জন্য ও খুব আনন্দের। সাধারনত বাংলা বর্ষের পৌষ ও মাঘ এই দুটি মাস শীতকাল থাকে। ইংরেজি বর্ষের ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস শীতকাল থাকে।


Source

প্রকৃতিতে অসংখ্য পরিবর্তনের ছাপ ফেলে চলে আসে শীতকাল। চারপাশের কুয়াশা ঢাকা পরিবেশটা অনেক সুন্দর লাগে। যদিও ভালো ভাবে কিছুই দেখা যায় না। গাছের পাতা সব ঝরে পরে যেতে থাকে। বৃষ্টি না হওয়ায় হাওর বাওর, নদী-নালা সব কিছু শুকিয়ে যায়। তবে একটি জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লাগে। শীতকালে বৃষ্টি না হওয়ায় রাস্তা ঘাটে কাদাঁও জমে না। কাদার উপর মাখামাখি করে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা কিন্তু কাদা ভর্তি রাস্তার উপর দিয়ে হাটতে আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগে। শীতকালে যেন প্রকৃতি হঠাৎ করেই বেশি শান্ত হয়ে যায়। সবকিছুর গতি ও কমে যায়। প্রকৃতিকে দেখে মনে হয় যেন তা মৃত্যুবরন করেছে।

শীতকালের সময়গুলোর মধ্যে শীতের সকালের কথা না বললেই নয়। আমি অবশ্য শহর এলাকায় থাকি। কিন্তু শীতকালে আমি আমার নানা-নানুর সাথে থাকার জন্য গ্রামে চলে আসি। প্রায় প্রতি বছর ই আমি বাড়িতে চলে আসতাম। আজকে আমার নানা বাড়িতে কাটানো শীতকাল সম্পর্কে লিখবো।

আমি সাধারণত খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম। শীতকালে আমি ৫ঃ০০ টায় ঘুম থেকে উঠতাম। এই সময় ঘুম থেকে উঠা সব কঠিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কঠিন কাজ। আামার নানা ভাই রোজ আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। লেপ ছেড়ে উঠতেই পারতাম না। অনেক বিরক্ত লাগত। আমার নানা ভাই অনেক চেষ্টার পর আামাকে তুলতেন। আমি ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে পাশের বাড়িতে যেতাম। সেখানে আমার কয়েকজন সমবয়সী মামাতো ভাই থাকতো। আমরা সবসময় একসাথেই খেলতাম, ঘুরতাম। মোট কথা যেখানেই যাই দলবেঁধে যেতাম। তো সবাই ভোরে একসাথে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতাম। ওযু করতে গিয়ে আরও ঝামেলায় পরতাম। একই তো শীত আবার পানি লাগাতে হবে সারা গায়ে। তবে সবাই নামাজের ব্যাপারে সতর্ক ছিল। তাই আল্লাহ্ এর রহমতে সেই কঠিন কাজটিকে আনন্দের সাথেই জয় করতাম। নামাযের পর হাটতে বের হয়ে যেতাম সবাই। এই সময়টাই সবচেয়ে দারুণ লাগতো। মানুষের বাড়ির সামনের ফুলগাছগুলোতে সুন্দর ফুল ফুটে থাকতো। শিশির ভেজা গাছের পাতাগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগতো।

আমার নানা বাড়ির কাছেই গোমতী নদী। আমরা সবাই মিলে গোমতীর পাড়েই হাটতে যেতাম। নদীটির একপাশে ফসলের বিস্তির্ণ মাঠ এবং অন্যপাশে উচু রাস্তা আছে। রাস্তাটিতে হাটতে সময় নিজেকে একটা উড়ন্ত পাখি মনে হতো। কারন রাস্তাটি ছিল উচু তাই বাতাস ও থাকত একটু বেশি। আবার কুয়াশার কারনে ভালোভাবে কোনোকিছু দেখা ও যাচ্ছিলো না। তাই মনে হতো যেন আকাশে উড়ছি। এই রাস্তা দিয়ে হাটতাম আর সবাই মিলে অনেক মজা করতাম। আরও অনেক মানুষকে ঐ রাস্তায় হাটতে দেখতাম। সকালের শারিরীক ব্যায়ামের জন্যই আসতো অনেকে। ঐ রাস্তাটির দুই পাশে অনেক গাছগাছালি ছিল। বিভিন্ন ফলের গাছই বেশি ছিল। সেগুলো ছিল উন্মুক্ত। আামরা মাঝেমাঝেই সেসব গাছগুলো থেকে ফল পেড়ে খেতাম। এক-দেড় ঘণ্টা হাটার পর সেখানে কোনো একটি দোকানে বসে সবাই চা খেতাম। শীতের সকালে চা খাওয়ার মজাটাই আলাদা। তারপর সবাই ঘরে ফিরে আসতাম সকাল ৮ঃ৩০ এর মধ্যে। এসেই দেখতাম আমার নানু পিঠা বানাচ্ছে। খাওয়ার জন্য বসে যেতাম ওনার পাশে। সেখানে নানুর সাথে কথা বলতে বলতে পিঠা খেতাম। আমি আমার নানুর কাছে একেক দিন একেক পিঠা বানানোর জন্য আগে থেকেই বলে রাখতাম। আামার নানু ও আমার জন্য নানা ধরনের পিঠা বানানোর জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে রাখতেন। আমি কবে শহর থেকে বাড়িতে আসবো তার জন্য তিনি সাগ্রহে অপেক্ষা করতেন। পিঠা বানানোর সব সরঞ্জাম প্রস্তুত করে রাখতেন। আামার কাছে চিতুই পিঠা, পুলি পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধচিতুই পিঠা, ডিম পিঠা এগুলো খুবই ভালো লাগতো। এভাবেই সারা সকাল কেটে যেত আমার।

শীতকালে আমার নানা বাড়ির ক্ষেত গুলোতে কোনো ফসল লাগানো হয় না। তাই এই মৌসুমে মাঠগুলো খালি থাকে। এই সময় সবাই ধানক্ষেতে ক্রিকেট খেলার জন্য জায়গা বানায়। আমি আবার ক্রিকেট খেলতে খুব পছন্দ করি। তাই সারাদিন ক্রিকেটের বিভিন্ন আন্ঞ্চলিক টুর্নামেন্ট খেলে কাটিয়ে দিতাম। বিকালের শেষ দিকেই আবার শীত নামত। শীতের কাপড় পড়ে সন্ধ্যায় হাটতে বের হতাম। কোনো কোনো দিন কেরাম খেলতাম। অবশ্য আমি অতটা ভালো পারতাম না। কিন্তু তারপরও খেলতাম। এশার নামাজটা পড়ে চলে যেতাম ব্যাডমিন্টন খেলতে। ব্যাডমিন্টন খেলার আলাদা একটা মজা আছে। নিজেরা ব্যাডমিন্টন এর কোর্ট বানাতাম। কাছাকাছি এক মামার বাড়ির কারেন্টের মিটার থেকে কারেন্ট এনে লাইট লাগাতাম। তারপর খেলা শুরু করতাম।

সেখান থেকে বাসায় এসে নানা-নানুর সাথে আড্ডা দিতাম। সারাদিন যা কিছু করতাম সবকিছু নিয়ে কথা বলতাম। আমাকে খুশি দেখে আমার নানা-নানু আরও বেশি খুশি হয়ে যেত। তাই মাঝেমাঝেই আমি কোনো দূর্ঘটনা ঘটলেও বাসায় জানাতাম না। নিজেই সমাধান করে নিতাম। রাতের খাবার খেয়ে আমরা মোটা সোটা একটি লেপ এ ঢুকে পরতাম। লেপের নিচে যাওয়ার সাথে-সাথেই ঘুমিয়ে পড়তাম। শীতকালের ঘুম এমনিতেও খুব আরামদায়ক হয়। আাবার সারাদিনের পরিশ্রমে অনেক ক্লান্ত ও হয়ে থাকতাম। তাই সুন্দর একটা ঘুম ঘুমাতে পারতাম। শীতকালে শহুরে এলাকার চেয়ে গ্রামে ঠান্ডা বেশি পড়ে। তাই আমি যখন গ্রামে যেতাম তখন ভালোভাবে শীতের কাপড় নিয়ে যেতাম। আসলে এই সময়টি সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো মূলত পড়ালেখার চাপ না থাকার কারনে। স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পারতাম।

আমি স্কুলে পড়ি। আমার বার্ষিক পরীক্ষাগুলো হয় সাধারণত ডিসেম্বর মাসে। পরীক্ষার শেষেই প্রতিষ্ঠান থেকে শীতকালিন ছুটি দিত। আর আমি পরীক্ষা শেষ করে সাথে-সাথেই বাড়িতে চলে আসতাম। সত্যি কথা বলতে আমি শেষ পরীক্ষাগুলো পুরোপুরি মনযোগ দিয়ে দিতেও পারতাম না। কারন, সারাদিন বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা চিন্তা করতাম।

আমাদের দেশে জানুয়ারি মাসের শেষে শীতের দাপট ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। ফেব্রুয়ারীর মাঝা মাঝি এসে শীতকাল শেষ হয়ে যায়। সবাই আবার শীতের অলসতা ছেড়ে নতুন উদ্যমে কাজ কর্মে বেরিয়ে পরে। আমিও ফিরে আসি নিজের পড়ালেখায়। এভাবেই আমার শীতকাল কেটে যায়। নতুন বছরের শীতকাল এসে পড়েছে। তাই আমিও বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। এই ছুটির মূহুর্তটাই আমার কাছে বছরের সবচেয়ে বেশি আনন্দের সময়।

আমি আমার সবচেয়ে মজার সময়টির কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম। আশা করি সবার কাছে ভালো লাগবে। যদি আাপনাদের কোনো মতামত থাকে তবে দয়া করে একটি কমেন্ট করে যাবেন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আবার পরবর্তী ব্লগ নিয়ে খুব তারাতারি হাজির হবো ইনশাআল্লাহ।



0
0
0.000
1 comments
avatar

Congratulations @emran14! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You distributed more than 10 upvotes. Your next target is to reach 50 upvotes.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

0
0
0.000