বেঁচে থাকা মানে....

avatar

সকাল ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, জানালার পাশের দেবদারু গাছটি ও ভিজে একদম জুবুথুবু। নাফিসার বৃষ্টি ভালোলাগে। বৃষ্টি বলতে একদম ঝুম বৃষ্টি! যে বৃষ্টিতে কান্না লুকানো যায়, আচ্ছা গাছেরাও কান্না লুকানোর জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে! দেবদারু গাছটির ও মনে হয় নাফিসার মতো অনেক দুঃখ আছে। আর দুঃখ থাকবেনা বা কেনো? নাফিসার বয়সের সমান দেবদারু গাছটির বয়স, দুটো আলাদা বস্তু হয়েও ওরা বড়ো হয়েছে একে অন্যের বন্ধু হয়ে!

নাফিসার আজ থেকে বিশ বছর আগের কথা মনে পড়ে, এই রকম এক বৃষ্টি মুখর দিনে সে তার মাকে হারিয়েছে। সবাই জানতো তার মা জ্বরে মারা গেছে, দুই দিন আগে নাফিসাও তাই বিশ্বাস করতো কিন্তু এখন আর সে বিশ্বাস করেনা। সে জেনে গেছে তার বাপ তার মাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে।

নাফিসার মার বিষন জ্বর ছিলো, সাথে গায়ে ব্যাথা,খাওয়া দাওয়ার রুচি ছিলোনা তাই খেতে পারতো না। ফলাফল শরীর দুর্বল! ডাক্তার ঔষধের পাশাপাশি দুধ খেতে বলবেন। নাফিসার বাপ, হেলাল সাহেব সুযোগ বুঝে দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে দিলেন।

প্রমাণ লুকানোর সুযোগ এর ছেয়ে তো আট ভালো পাওয়া যাবেনা। নাফিসার বাপের পরোক্রিয়া নাফিসার মা জোহরা বেগম টের পেয়েছিলো। টের পেলে তো সমস্যা ছিলোনা কিন্তু দেখতে পাওয়াটাই জোহরা বেগমের জীবনে কাল হয়ে গেছে।

পুরুষ মানুষ একটু আধটু পরোক্রিয়া করে তাই বলে নিজের শালীর সাথে! জোহরা বেগম তাই মেনে নিতে পারেননি। মেনে নিবেন কী করে যখন দেখেন নিজের ছোট বোন শুইয়ে আছে তার বোনের স্বামীর সাথে!

জোহরা বেগম এই দৃশ্য দেখার পর সেদিন আট খাওয়া দাওয়া করেন নি। বৃষ্টিতে এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে ভিজে জ্বর বাধিয়েছে।

হেলাল সাহেব রিস্ক নিতে চাননি, সামনে নির্বাচন, জানাজানি হলে তার আর এলাকার চেয়ারম্যান হওয়া লাগবেনা। তাই সুকৌশলে সরিয়ে দিলেন পথের কাটা, পাক্কা রাজনীতিবীদদের মতো করে!

জোহরা বেগমের মৃত্যুর পর তার ছোট বোন রোকেয়াকে বিয়ে করে হেলাল চেয়ারম্যান। নাফিসার এমপি বাপও মেনে নে কারণ নাফিসাকে মানুষ করা বলে কথা।

বিশ বছর পর আজও নির্বাচনের আমেজ, সে আমেজে দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে তৃপ্তি নে হেলাল চেয়ারম্যান, কারণ সে আজ এমপি এলেকশন করবে, সতন্ত্র পার্থী হিসেব লড়বে তার শ্বশুরের বিরুদ্ধে।

রোকেয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা বিষয় টা, তাই সে নাফিসার সাথে শেয়ার করে তার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল বিষয়।

হেলাল সাহেব ঘরে ডুকতে নাফিসার সাথে দেখা হয়, নাফিসা বাপের দিকে একবার তাকায়।হেলাল সাহেব নাফিসার তাকানোর ভঙ্গি দেখে ভ পেয়ে যায়, এই মেয়েতো কোনদিন এইভাবে তাকাই নি!

হেলাল সাহেব মনে মনে ভয় পেয়ে যায়, সব কিছু কি তাহলে নাফিসা জেনে গেলো! শুনো বাবা "সব সময় জিততে নেই, কিছু হার ও দরকার মানুষের জীবনে" নাফিসার কথায় আরো চমকে যায় হেলাল চেয়ারম্যান।

Source Pixabayimg_0.8377727330827183.jpg



0
0
0.000
1 comments