একটি গল্প এবং বাস্তবতা

avatar

দুটি কাকের মধ্যে গলায় গলায় ভাব। একটি কাক শহরে থাকে ।আর অন্য কাকটি গ্রামে থাকে। প্রায়ই তারা একে অপরের সাথে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা করে। কিন্তু তাদের কেউই কারও স্থানে যায়না। এবার গ্রামের কাকটি শহরের কাকটিকে অনেক অনুরোধ করলো গ্রামে বেড়াতে আসার জন্য। শহরের কাকটি প্রস্তাব গ্রহণ করল। শহরের কাকটি বলল ঠিক আছে, একসময় আমি তোমার এখানে বেড়াতে আসবো।

শহরের কাকটি তার কথামতো চৈত্র মাসে গ্রামের কাকটির কাছে আসলো। কিন্তু তখন গ্রামের কাকটির করুন অবস্থা। চারদিকে প্রখর রোদের তাপে খাদ্য সংকট। গ্রামের কাকটি খাদ্যের অভাবে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। গ্রামের কাকটি চিন্তায় পড়ে গেল তার বন্ধুকে কি খেতে দেবে, নিজেরই তো কোন খাবার নেই। সারাদিন এদিক-সেদিক ঘুরে ফিরে সামান্য খাবার পায় মাত্র। তাতে নিজেরই চলে না। আর বন্ধুকে খাওয়াবে কি! শহরের কাক টি বন্ধুর করুন অবস্থা দেখে বললো, চলো আমার সাথে শহরে। সেখানে খাবার এর কোন অভাব নেই। গ্রামের কাকটি নিজের দুর্দশার কথা চিন্তা করে, খাবারের লোভে পড়ে ,বন্ধুর কথায় রাজী হয়ে গেল এবং শহরের উদ্দেশে রওনা দিলো।

20200901_083530.jpg

এবার দুই বন্ধু শহরে এসে পৌঁছেছে। গ্রামের কাকটি খেয়াল করলো, সত্যিই তো শহরে খাদ্যের অভাব নেই। ডাস্টবিন কিংবা রাস্তার পাশে ,বাসি পচা খাবার ফেলে ডাস্টবিন বানিয়ে রেখেছে। গ্রামের কাক টি খাদ্য দেখে খুবই খুশি হলো। এত ভাল ভাল খাবার সে আগে কখনো খায়নি। গ্রামের কাকটি খুব দ্রুত খাওয়া শুরু করলো। শহরের কাক টি বলল বন্ধু ধীরে ধীরে খাও। এখানে আরো অনেক ডাস্টবিন আছে। গ্রামের কাকটি ইচ্ছেমতো পেট পুরিয়ে খেলো। এবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে শহরের কাকটি একটু ইতঃস্তত বোধ করে বলল, বন্ধু এখানে খাবার অভাব নেই। কিন্তু থাকার একটু সমস্যা আরকি। যাই হোক কোনো ভাবে ম্যানেজ করে নিব। তারা উড়ে গিয়ে অনেক দূরে একটি গাছে বসলো। শহরের কাকটি বলল, বন্ধু আজকে এখানেই রাত কাটাবো। গ্রামের কাকটি বলল ,বাসা ছাড়া কিভাবে থাকো? যাই হোক সমস্যা নেই। শহরের কাকটি জবাব দিল শহরে গাছপালার সংখ্যা খুবই কম। তাই কোনমতে রাত কাটাতে হয়।

এবার দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথন শুরু হলো। অনেকদিন পরে দেখা হলে যা হয় আর কি। গ্রামের কাকটির চোখে-মুখে কৌতূহলের অভাব নেই। সে বলল আচ্ছা বন্ধু ,শহরের মানুষ এত ভাল ভাল খাবার রাস্তায় ফেলে দেয় কেন? তারাতো চাইলে তাদের প্রতিবেশীদের দিতে পারতো? প্রতিবেশী বলে হাসতে শুরু করল শহরের কাকটি। পাশাপাশি ফ্লাটে থাকলেও তাদের কেউ কাউকে চিনে না।কেউ কারো খোঁজ খবর নেন না। তাই তাদের অতিরিক্ত খাবার অনেকেই রাতের আঁধারে রাস্তায় ফেলে যায়।ওরা দিনের বেলা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় কিভাবে? ওদের গন্ধ লাগে না? গ্রামের কাকটি জিজ্ঞাসা করলো।ওরা দিনের বেলা পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন করে আর রাতের আঁধারে রাস্তায় ময়লা ফেলে যায় ।ওরা এমনই। শহরে কাকটির জবাব।

যাইহোক এভাবে ভালই সময় কাটছিল তাদের। কয়েকদিন পর গ্রামের কাকটি বলল,বন্ধু শহরে সবই ঠিক আছে। কিন্তু এখানে মানুষের চাপ আর গাড়ির ধোঁয়ায় পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ।এখানে আমার ভালো লাগে না ।আবার মানুষের এত কোলাহল। কিছুক্ষণ পর গ্রামের কাকটি খেয়াল করলো ,কোথাও কিসের যেন গন্ডগোল লেগে আছে। সে উৎসুক হয়ে তার বন্ধুকে বললো, চলো দেখে আসি সেখানে কি!
শহরের বন্ধু বলল সেখানে যেয়ে লাভ নেই। এখানে প্রতিনিয়ত-ই এমন গন্ডগোল লেগে থাকে। হয়তো কোনো রাজনৈতিক ঝামেলাটা টামেলা হবে আরকি!
কিন্তু গ্রামের কাকটি নাছোড়বান্দা।সে দেখতে যাবেই। শহরের কাকটি বলল ঠিক আছে তাও । কিন্তু দূর থেকে দেখ। কাছে যেয়ো না। ওরা কি সব ফেলে তখন চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। গ্রামের কাকটি দেখতে গেল। কিন্তু দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। সে কারনে সে আরো একটু কাছাকাছি এগিয়ে যেতে না যেতেই এক বিরাট বিস্ফোরণ।আর তাতে কৃষ্ণ বিক্ষত হয়ে গেল গ্রামের কাকটি। শহরের কাকটি খেয়াল করল , তার বন্ধুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।সে এদিক সেদিক ঘুরে তার বন্ধুকে আবিষ্কার করল। দেখল বন্ধুটি আর বেঁচে নেই।সে কা কা করে ঠোঁট রাস্তায় ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে বন্ধুর প্রতি সমবেদনা জানালো।

গল্পটির সাথে আমাদের বাস্তবতা হচ্ছে,আমরা কেউ ই নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট নই। ঠিক গ্রামের কাকটির মতো। সামান্য একটু অভাবেই ভাবি, উনারা আমাদের চেয়ে কতটা সুখী।আর সেটাই আমাদের জীবন এর সবচেয়ে বড় ভুল।আর এখানে আমি যে বিষয়টি ফোকাস করতে চেয়েছি সেটা হলো শহরের জীবন ব্যাবস্হা। আমরা খাদ্যের কতটা অপচয় করি। আর সেই খাদ্য রাস্তায় ফেলে ,রাস্তাটাকে কিভাবে ডাস্টবিন করে ফেলি। আমরা বাঁচার জন্য কতটা অভিনয় করি। আমাদের দিনে ও রাতে আমাদের চেহারাকে কিভাবে বদলে ফেলি।আর শহরের রাজনৈতিক অবস্থা যা আমাদের জীবন যাপন কে বাধাগ্রস্থ করছে।আর ঝরে পড়ছে কিছু নিষ্পাপ প্রাণ। কেননা এই শহরে কারো প্রতি কারো সৌজন্যবোধ নেই। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদেরকেই চিনি না।কত নিষ্ঠুর আমারা। কত নিষ্ঠুর আমাদের জীবন।

আমি কে
MYXJ_20200109171911_fast.jpg

আমি মোঃ কাউছার হাসান। আমি বাংলাদেশী এবং নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি ।কারণ আমি আমার দেশকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কারণ এটি আমার মাতৃভূমি।আমি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছি।আমি যখন আমার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নতুন কিছু শিখাতে পারি ।আমার কাছে তখন অন্য রকম অনুভুতি হয়। আমিও প্রতিদিন নতুন কিছু করতে পছন্দ করি, আমি নতুন নতুন লোকের সাথে মিশতে পছন্দ করি এবং নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করি। আমি নিজেকে সর্বদা প্রকৃতির ছাত্র হিসাবে ভাবি। কারণ প্রকৃতি থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি কেবল শিখার জন্য ছোট চেষ্টা করি। আমি ভ্রমণ করেতে ভালোবাসি. ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। শিখতে ও লিখতে ভালোবাসে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই লিখতে চেয়েছিলাম এবং সে কারণেই আমি প্রায়ই লেখার পিছনে পড়ে যাই। আমি মানুষকে শ্রদ্ধা করার চেষ্টা করি। আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন তবে আপনার আত্মমর্যাদা হ্রাস পাবে না বরং বৃদ্ধি পায়।



0
0
0.000
0 comments