শেষের গল্প

avatar


আমাদের জীবনের প্রতিটি গল্পই শুরু হয় মধুর কিন্তু শেষটা সবসময় মধুর হয় না। প্রতিটি মানুষের জীবনে এরকম মুহূর্ত আসে যখন মানুষ ভাবতে শুরু করে এখন সবকিছু ঠিক হবে, ঠিক ওই মুহূর্তে এমন কিছু ঘটে যায় যা সমগ্র ভাবনা গুলোকে উলট পালট করে দেই। জীবন যুদ্ধে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়, সবকিছু সময়ের আদলে বদলে যায়। এই মুহূর্তগুলোর কোন আক্ষরিক ব্যাখ্যা হইতো নেই, অন্তত আমার জানা নেই, কিন্তু মনে যে দাগ কেটে যায় তা বয়ে বেরাতে হয় সারাটা জীবন।

আপু তার হাত ঘড়িটার দিকে একটু তাকাল, সময় তখন ৪ টা বেজে ১৫ মিনিট সে নিজের চোখকে বিশ্যাস করতে পারছেনা, সে মনে মনে ভাবল কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি সময়টা শেষ হয়ে গেল। ভালবাসার মানুষটি পাশে থাকলে মনে হয় সময়টা তাড়াতাড়িই শেষ হয় এটা বলে নিজেকে শান্তনা দিল। এসব ভাবছে আর তমার দিকে অপূর্ণতা নিয়ে তাকিয়ে আছে? তমা খেয়াল করেছে ব্যাপারটা কিন্তু সে কিছুই বলল না, বরং সে একটা ছোট্ট হাসি দিল। অপু কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখগুলো নামিয়ে নিল, কিন্তু কিছুখন আবারো তমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।

এভাবে কখন যে বিকাল ৫ টা বেজে গিয়েছে দুজনের কেউই টের পেল না। অপুর পরনে ছিল নীল পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা, আর তমার একটি খয়েরি রঙের জামদানি শাড়ি, দুজনকে পাশাপাশি আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। অপুর খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তমাকে নিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে। কিছুক্ষন পর অপু তোমাকে বলল চলো কিছুক্ষণ এই ছোট্ট রাস্তাটি ধরে দুজন হাটি। তমা যে শাড়িখানা পড়ে আছে সেটা পরে হাটা সহজ হবে না, সে কিছুক্ষণ ভেবে অপুর সাথে হাটতে শুরু করল। দুজনের মনে একটি চাওয়া জীবনের বাকিটা পথ যেন একই সাথে পাড়ি দিতে পারে।

সন্ধে ৬ টা, অপু আবারও ঘড়ির সময়টা দেখে নেই, বন্ধুর বিয়ের প্রোগ্রাম ৭ টা বাজে এখন যদি সে রওনা না দেই ঠিক সময়ে প্রোগ্রামে পৌছাতে পারবেনা। সে খুব দ্রুত একটা রিক্সা ঠিক করে, তারপর তমাকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার এর দিকে রওনা হয়। এদিকে তমা আজ নিজেকে মুক্ত পাখির মত মনে করছে, সে কখনো ভাবেও নি এরকম সন্ধ্যাবেলা সে রিক্সাতে করে ঘুরে বেড়াবে। এসব ভাবতেই তার আনন্দে বুকটা ভরে উঠলো। ঠিক পনে ৭ টাই অপু আর তমা তাদের গন্তব্যে পৌছে গেল।

কমিউনিটি সেন্টার পাশে দাড়াতেই বিয়ের লাইটিং টা চোখে পড়ল, খুব সুন্দর লাগছে দূর থেকে। অপু আর তমা সামনে এগোতেই অপুর কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল, সবাই সুট টাই পড়ে এসেছে, সবাই অপু আর তমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। অপু সবার সাথে তমাকে পরিচয় করিয়ে দিল, তমার কেন যেন এখন খুব লজ্জা লাগছে। সবার সাথে দেখা করে ওরা দুজন একসাথে বসে আছে, হঠাৎ অপু খেয়াল করল তমা খুব মনোযোগ দিয়ে লাইটিং দেখছে।

দেখতে দেখতে অনেক সময় পেরিয়ে গেল, রাত তখন ৮ টা এখনও প্রোগ্রাম শুরু হয়নি, এদিকে তমার বাড়ি থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে। ঠিক সাড়ে আটটায় প্রোগ্রাম শুরু হলো। খাওয়া দাওয়া সেরে অপু সবার কাছ থেকে বিদায় নিল। রাত বাজে ৯ টা, অপু তড়িঘড়ি করে একটা সিএনজি ঠিক করল। ঠিক ৯:৩০ টায় অপু তমাকে বাড়ি রেখে নিজের বাসায় রওনা দিল।

অপুর হঠাৎ ই মনে হলো তার হাতের ব্যাগটা নেই, তাড়াহুড়োর মধ্যে সিএনজিতেই ভুলে রেখে এসেছে। তার মনটা মুহুতেই খারাপ হয়ে গেল, এত রাতে সে কোথাই খুজবে ঐ সিএনজি ড্রাইভারকে। ব্যাগটা তমা অপুর হাতে দিয়ে বলেছিল পরে খুলবে। এসব ভাবতে ভাবতে সে বাসায় রওনা দিল। আজ সারাটা দিন এত আনন্দে কেটেছে কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব যেন কেমন ওলট পালোট হয়ে গেল।

সমাপ্ত



0
0
0.000
7 comments
avatar

সে মনে মনে ভাবল কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি সময়টা শেষ হয়ে গেল

এটা আমাদের বাস্তব জীবনেও ঘটে। আনন্দঘন সময় গুলো খুব তাড়াতাড়ি খরচ হয়ে যায়।

0
0
0.000
avatar

Suddenly, it comes, and suddenly it goes, but that's how life is so charismatic. When it's gone, it hards to believe that it's gone.

0
0
0.000
avatar

It's hard but true. We have to accept the reality

0
0
0.000
avatar

That's how life works... something it comes with splendid joy and sometones some unexpected events wash everything away.
Good to go through your writing.

0
0
0.000
avatar

I agree!!! Life is a series of unfortunate events, which always surprise us with something that we never expected.

0
0
0.000