সাদা রঙের বাতি
কেও ভালো নেই। দুই বছর আগের ক্যাম্পাসের সেই লিকলিকে বুড়োটার নাতির সাথে দেখা হয়েছিলো আজ, বল্লাম ক্যামন আছে, হাদি চাচা??? সে কিনা বল্ল, মরে গিয়ে বেচে গিয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর একটা বাচ্চার মুখে জীবনের বাস্তব ফিলোসোফি আমি কখনোই আশা করি নাই৷ কিছুটা আপসেট হলাম, বাট আগ্রহ হলো তার মুখ থেকে শুনতে, মানুষ মরে গেলে বেচে যায় কি ভাবে??! কে শিখালো তোকে এমন কথা?? কিছুটা কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে বল্লে, বাবা বলেছে৷
আমাদের নাকি অভাবের সময়, নিজেরাই ভাত পাইনে, তাই দাদুর খরচ অনেক ভারী মনে হতো।
বাবা বলেছে, নিজে বাচলে বাপের নাম। করোনা নাকি তাদের রোজকের ইনকাম বন্ধ করে দিয়েছে ।
করবেই না ক্যানো?? ক্যাম্পাস জে বন্ধ৷ এই মহামারি তে কারো কি ভালো থাকার জো আছে??
শোভানার কথা মনে পরে গেলো। চার বছর আগে হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছিলো, আমায় নিয়ে ভালো থাকবে৷ অথচ, কথা রাখে নি শোভানা। আজ সে একাই ভালো আছে৷ আমি এখন আর নতুন কুনো হাত খুজি না।
ভালো থাকার ইচ্ছা টা কে খাচায় বন্দি করছিলাম চাবি টা ফেলে এসেছি টেমস নদী তে৷ হয়তো অবাক হবেন, এই ব্যাটা আবার লন্ডন গেলে কবে!!??!!! আসলে, টেমস নদী আমাদের শহরের একটা শাখা নদীর নাম৷ প্রথম যেদিন হাত ধরেছিলাম তার, এ নদীতে ছিলো উত্তাল ঢেউ। ফুলে ফেপে সাগরের মতো গরজে উঠেছিলো।
আসলে, টেমস নদীর পাড়েই আমাদের "দক্ষিণ তালপট্রি" গ্রাম। অজশ্র সৃতি বিজোরিত আমাদের গ্রাম৷ এখানেও কলা গাছের ভেলায় করে শালুক তোলার ভীড় জমে। উত্তরে চন্দন বিলে তাকালে মনে হয়, দূর আকাশে মেঘেরা শালুক তুলতে বুঝি বিলের জলে নাইতে নেমেছ৷ সাদা বকের দলে দু একটা কানা বক চোখে পরতেই পারে৷
ভালোবাসার এক অপরুপ কারুশিল্পীর কমোল হাতের ছোয়ায় জেনো সাজানো চারপাশ। কচুরিপানা দিয়ে আমরা টাইটানিক বানাতাম, তারপর, শোভানা কে নিয়ে পারি জমাতাম, বেশ ভালোই চলতো দিনগুলি৷ কিন্তু ওইজে, কেও কথা রাখে না। সুনীল দা তো অনেক আগেই বলে গিয়েছেন। বত্রিশ বছর ধরে কেও কথা রাখে নাই। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। আমি এখনো বেকার, বেচে আছি৷ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারত। আর, হাফি চাচা, মরে গিয়ে বেচে গিয়েছে৷
আমাদের ক্যাম্পাস টা আমাদের গ্রামের পাশেই। সে কারনেই ক্যাম্পাস আর গ্রাম একাকার হয়ে শিল্পীর ছোয়ায় ধরা দেয়।
হাত ধরে হাটার দিনগুলি অনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছে, একটা গ্রীন সিগনালের জন্য ওয়েট করেছিলো শোভানা৷ আমি তাকে কনো গ্রীন সিগনাল দিতে পারি নাই। সে আজ অন্য কারো। আমার কাছে পৃথিবীর সকল বাতিই এখন সাদা রঙের মনে হয়।
এই টেমস নদী, আর চন্দন বিল আজীবন বেচে থাকবে৷ হয়তো হাদি চাচার জায়গা টা অন্য কেও দখল করে নেবে। হয়তো, এই বুড়োর সন্তানের মৃত্যুতে কুনু একদিন হাদি চাচার নাতি আবারো বলে উঠবে, বাবা মরে গিয়ে বেচে গিয়েছে৷ এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
নিয়তি বড় কঠিন ভাই । ভালো লিখেছেন।
This post earned a total payout of 0.674$ and 0.337$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.