Ashaa Othoba Nirashaa: আশার ইতি

avatar

"মনে করো এই ৫ টি বছর জীবনের একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো। সবকিছু নতুন করে শুরু করো, এই সামান্য ব্যাপারে জীবন থেমে যাবার নয়। তুমি নিজেকে গুছিয়ে নাও, অনেক ভালো কেউ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য, আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসবে তোমায়।"

কথাগুলো বলে অঝোরে কেঁদেছিলো ইতি। হয়তো আরো অনেকটা সময় কাঁদতো, কিন্তু হঠাৎ করেই ইতির ফোনটা বেজে উঠলো। "অমিত এর ফোন", যার সাথে আগামী শুক্রবার ইতির বিয়ে।
"আমার ইতির বিয়ে।"
আমার বললাম কারণ, ইতির চোখের জল স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে সে এখনো আমারই আছে।

খুব ইচ্ছে করছে শেষবারের ইতিকে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু তা উচিৎ হবেনা। তাহলে হয়তো আমার ভিতরের পাথর টা চূর্ণ হয়ে যাবে, হয়তোবা আমার এই শক্ত হয়ে থাকার অভিনয় ইতি বুঝে ফেলবে।

ইতি আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে অমিতের সাথে কথা বলছে। আজ ওদের বিয়ের শপিং এ যাবার কথা। সম্ভবতো সেই নিয়েই কথা হচ্ছে দুজনের মাঝে। খুব শক্ত মানসিকতার মেয়ে ও, বুঝাই যাচ্ছেনা মাত্রই অঝোরে কাঁদছিলো মেয়েটি। ইতি কথা শেষ করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

মনে পরে ভার্সিটিতে থার্ড সেমিস্টারে ভাইবা খারাপ হওয়ায় খুব কেঁদেছিলো মেয়েটি, আমি ওকে পাশে বসে সান্তনা দিচ্ছিলাম আর নিজেও কাঁদছিলাম ওর কান্না দেখে। কিন্তু আজ আমি কাঁদছিনা, কোথায় যেনো হাড়িয়ে ফেলেছি আমার সকল কান্না।

আমাদের সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিলো একটা দূর্ঘটনার মাধ্যমে। ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে এসে আমি আমার সকল কাগজপত্র সহ ফাইল হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। একপাশে সকল কাগজপত্র হাড়ানোর দুশ্চিন্তা, অপরপাশে আমার সাথে আসা আমার মামার ঝাড়িতে যখন আমি বিপর্যস্ত। মামার উচ্চশব্দের চেঁচামেচি তে আশেপাশের সবাই জেনে গেছে ভুলোমনা আমার এই অকর্মের কথা। হঠাৎ করে একটা মেয়ে একটা ফাইল নিয়ে আমার সামনে এসে বললো সেটা আমার ফাইল কিনা?
হুম সেটাই আমার ফাইল ছিলো আমি আনন্দে তাকে ধন্যবাদ দেয়ার কথাটাও ভুলে গিয়েছিলাম।

যেদিন প্রথম ক্লাসে হাজির হলাম, অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেই মেয়েটা আমার ক্লাসমেট। অবশ্য সেদিন আর ধন্যবাদ দিতে ভুল করিনি আর সাথে বন্ধুত্ব করে নিতে।
সেই বন্ধুত্ব যে কখন ভালবাসায় রূপ নেয় তা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। সেই ভর্তির দিনের ভুলো ছেলেটার সকল ব্যাপার মনে করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব যে সে নিজে নিয়ে নিবে সেটা সে আমাকে শাসনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছিলো।

আমাদের ভালবাসায় বহিঃপ্রকাশ এর চেয়ে আত্মিক ব্যাপারটার আধিক্য ছিলো। একই ক্লাসে পড়া সত্বেও নিজেরা খুব বেশি আলাদা সময় কাটাতাম না আমরা।

খুব মনে পড়ছে এক শ্রাবণ দিনের কথা, একই ছাতায় আমরা দুজন একটা গ্রাম্য পথে হেঁটেছিলাম। বাতাসের ঝাপটায় দুজনেই ভিজে একাকার কিন্তু সেদিন সেই পথকে জীবনের সর্বস্ব মনে হচ্ছিলো। এই পথে অনন্তকাল হেঁটে যাবার শপথ নিয়েছিলাম দুজন।
সেদিন রাতে জ্বরের হামলায় দুজনেই শয্যাগত। কিন্তু সেই পথের মায়ায় জ্বর গায়েই সারারাত ফোনে কথা বলেছিলাম আমরা। সেদিন রাতে সে আমাকে প্রমিজ করিয়েছিলো, বাসর রাতে আমরা দুজন সারারাত কথা বলে কাটাবো, আমিও বিনা তর্কে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।

খুব মনে পড়ছে, যেদিন ওকে শাড়ীতে দেখেছিলাম সেই দিনের কথা। কালোর মাঝে ছাই রংয়ের হালকা ডিজাইন এর একটা শাড়ী আর হালকা মেকআপ এর সাথে কপালে কালো রঙ এর একটা টিপ। শ্যামবর্ণ ইতি কাজল কে ওর নিজস্ব ব্রান্ড করে নিয়েছিলো। সবকিছুই সন্নিবেশে আমার মনে হচ্ছিলো, "ইতি ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কোন মেয়ের শাড়ি পড়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করা উচিত।"
এমন ভয়ংকর সুন্দরী কেউ হতে পারে সেটা আমার জানা ছিলো না।

সেদিন নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে পেয়ে আমি ভাগ্যবান। ইতিকে আমি গার্লফ্রেন্ড কম, বউ ভাবতাম বেশি।

ইতির ডাকে হঠাৎ আমার কল্পনার ইতি ঘটলো।

ওর যাবার তাড়া আছে, অমিত গাড়ী নিয়ে আসছে ওরা শপিং এ যাবে। ইতির বিয়ের শপিং এ।
আমার কাছ থেকে শেষবারের মতো বিদায় নিয়ে ইতি চলে গেলো। আর যাবার আগে শেষবার আমার বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণ কান্না করে গেলো।

ইতির কান্না আমি কখনোই সহ্য করতে পারতাম না, এখনও পারছিনা। কিন্তু আজ আমি নিরুপায়। আমার অন্তর আজ পাথরের প্রাচীরে বন্দী হয়ে আছে।

পৃথিবীর সিংহভাগ প্রেমের করুণ পরিণতি ঘটে প্রেমিকের ভালো জব না থাকার জন্য। কিন্তু আমি ব্যতিক্রম। আমার কাছে ভালো জব আছে আছে, আছে ইতিকে সুখে রাখার মতো যথেষ্ট অর্থ।

কিন্তু আমার এই দুর্ভাগ্যের দায় আমি জন্মসূত্রে প্রাপ্ত, আমার জন্মের পর থেকেই আমার বাবা মা সেপারেটেড। কিছুদিন পর দুজনেই নিজেদের মতো নতুন করে বিয়ে করে নেন। আর আমি বড় হই মামাদের সংসারে। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো।

আর ইতির পরিবারের এতেই আপত্তি। তারা সেপারেটেড ফ্যামিলির ছেলের কাছে তাদের মেয়েকে দিবেন না। আমি অবশ্য ইতিকে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলেছিলাম, কিন্তু সে ফ্যামিলির অবাধ্য হতে না চাওয়ায় দুজনেই এই পরিণতি মেনে নিলাম।

আমি এখন আমার প্রিয় নদীর ধারে যাবো, যে নদী আমার সকল দূঃসময় এর সাক্ষী। এতদিন মা বাবার কষ্টে আমি ঐ নদীর ধারে বসে কাঁদতাম, আর আজ কাঁদবো ইতিকে হাড়ানোর শোকে.....

IMG_20140918_200101.JPG

ধন্যবাদ সবাইকে

আর @bdcommunity কে ধন্যবাদ এমন একটা প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য।



0
0
0.000
4 comments
avatar

আবেগঘন গল্প। কনটেস্টে অংশগ্রহণের জন্য অভিনন্দন এবং শুভকামনা রইলো।

0
0
0.000
avatar

ধন্যবাদ আপনাকেও আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা পড়ার জন্য

0
0
0.000
avatar

Valo likhsen.
normally contest e join korle contest post link ta apnar entry te add more dben.
ete more apnar follower der subidha hobe contest post khuje Pete.

0
0
0.000
avatar

দারুণ লিখেছেন।

0
0
0.000