”আত্ম-নিয়ন্ত্রন” (Self-Control)


"ঘুড়ি তুমি যতই ছটফট করো, পালাবে কোথায়, নাটাইতো আমার হাতে!!!”

যদি শূন্য আকাশে এলোমেলো ভাবে উড়ন্ত ঘুড়ি আর চরম বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে চলমান আমাদের এই জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্যতা ও অসামঞ্জস্যতা খোজার চেষ্টা করি, তাহলে আদো কি আমরা কিছু খুজে পাব? হুম... অবশ্যই কিছু না কিছু সামঞ্জস্যতা ও অসামঞ্জস্যতা খুঁজেতো আমরা পাবোই। মুক্ত আকাশের হিমেল বাতাসে ঘুড়ি যতই দোল খাক না কেন, সে নিয়ন্ত্রিত হয় অপরের দ্বারা, ঠিক তেমনি আমাদের বাস্তব জীবনের অধিকাংশ বিষয়গুলোই আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে, শুধু পার্থক্য এইটুকুতেই ঘুড়ি নিয়ন্ত্রিত হয় যার হাতে নাটাই থাকে তার দ্বারা, আর আমরা নিয়ন্ত্রিত হই বহুব্যক্তি, বহুনীতি এবং বহুচেতনার দ্বারা। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, আমি যদি অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই, তাহলে আদো কি আত্ম-নিয়ন্ত্রন বলে কিছু আছে?

যেহেতু আমি কোন প্রকার কাব্য বা রূপকগল্প লিখছি না, সেহেতু শুধু শুধু ঘুড়াই প্যাঁচাই লাভ কি? ডাইরেক্ট পয়েন্টে আসা যাক, আমি একটু আগে যে বললাম, আমরা নিয়ন্ত্রিত হই বহুব্যক্তি, বহুনীতি ও বহুচেতনার দ্বারা, কথাগুলো মোটেও সত্যি নয় আবার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি এই কথাগুলোকে মিথ্যাও প্রমান করতে পারবেন না।


photo_20201022_024840.jpg

গোলকধাঁধায় পড়ে গেলেন নাকি? এখানে ধাঁধার কিছু নাই রে ভাই। খুবই সোজা সাফটা একটা বিষয়, এবং এর উত্তরটা আপনাকে আপনার আত্ম-উপল্বদ্ধি হতে নিতে হবে। মনে করুন আপনি বে-সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানটির নিয়মনীতি দ্বারা আপনি সদা পরিচালিত, আপনার সীদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের চুড়ান্ত সীদ্ধান্ত বলে কখনোই পরিগনিত হয় না, আপনি প্রতিষ্ঠানটির যে কোন কর্মকর্তার আদেশে পরিচালিত, উক্ত কোম্পানির সামগ্রিক চেতনা হয়তোবা আজ আপনার চেতনা। তাই বলে কি, আপনি সম্পূর্নরুপে অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত? না তা কখনোই নয়, আপনি সর্বক্ষনেই, সর্বক্ষেত্রেই আপনার নিজের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। আপনার অভিব্যক্তি, আপনার সদাচারন, আপনার কর্মদক্ষতা, আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার বিচক্ষনতা, আপনার সততা এবং আপনার বিবেকের উপরের কেউ বা কাহারো নিয়ন্ত্রন থাকতে পারে না।

আমাদের সমস্যাটা ঠিক কোথায় জানেন? আমারা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রনকে ব্যক্তি স্বাধীনতার সাথে গুলিয়ে ফেলি। যদিও বাস্তবিক অর্থে আপনি একজন আত্মনিয়ন্ত্রিত স্বাভাবিক ব্যক্তি, তার পরেও আমি আপনি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দিশেহারা হয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতার পিছনে ছুটি ক্ষান্ত হই। আমাদের নির্বোধ চিন্তা চেতনা আমাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রনের গন্ডী পেরিয়ে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রনহীন করে তোলে।


photo_20201022_024853.jpg

একটা ছোট্ট উদাহরন দেই আত্ম-নিয়ন্ত্রনের, ধরে নিনাম আপনার ধূমপান করার বদ অভ্যাস ছিল, কোন কারন বসত আপনি ধূমপান করা ছেড়ে দিয়েছেন। যখন জৈনিক কোন ধূমপায়ী ব্যক্তি আপনার সামনে ধূমপান করেন, এবং ধূমপানের নেশা আপনাকে প্রচন্ডভাবে পীড়া দিতে থাকে, কিন্তু তার পরেও আপনি ধূমপান করেন না, নিজেকে অতিকষ্টে সামলিয়ে রাখেন, এটাই আত্ম-নিয়ন্ত্রন। সদৃশ, আপনার ভিতরে যে প্রতিভা আছে, যে সততা আছে, যে পরিমান বিচক্ষনতা আছে, আপনি যদি বিবেকবান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার এই গুনাবলী গুলোর উপর সর্বাধিক নিয়ন্ত্রন আনার চেষ্টা করুন, এইসব গুনাবলীর উপর স্ব-নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা আপনাকে একজন প্রকৃত মানুষরুপে গড়ে তুলবে।

আমার কাছে পাগলের সংজ্ঞাটাকে কেমন জানি উল্টো মনে হয়। আমরা সকলে বলি পাগলের কোন আত্ম-নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা নাই। প্রকৃতপক্ষে আমার সম্পূর্নরুপে ভূলটা জানি। যে ব্যক্তিটা তার স্বকীয় চিন্তা শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে, নিজের খেয়ালিপনায় ব্যতি ব্যস্ত থাকে, আমার কাছে আপনার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক বলে মনে হয় তাই আমারা তাকে পাগল বলি। প্রকৃত অর্থে পাগলাতো আমরাই, আমরা মুখলজ্জার ভয়ে, অপমানের ভয়ে, সভ্য সমাজের সাথে নিজেদের তাল মিলিয়ে চলার নিমিত্তার্থে নিজের সত্ত্বার উপর বিরুপাচারন করে থাকি, আত্ম-নিয়ন্ত্রনের অভিনয়ে আমরা সকলেই অস্কার জয়ি।

Thanks for being with Me.



0
0
0.000
4 comments
avatar

এই ধরনের ব্লগ মানুষের জীবন বদলাতে সাহায্য করে।অনেক সুন্দর লিখেছেন।পড়ে খুবই ভালো লেগেছে

0
0
0.000