কিশোর গল্প: কালো বিড়াল (২য় পর্ব)

avatar

images (6).jpeg
বেড়ালটা রিতীশের দিকে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে


শুক্রবার। আজ রকিব উদ্দিনের অফিস বন্ধ। তিনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। বহুদিন পর গ্রামে যাচ্ছেন। শীতকালের গ্রাম মানেই খেজুরের রস আর ভাঁপা পিঠা। কতবছর খাওয়া হয় না!

রিতীশের রুমে গিয়ে দেখলেন ছেলেটা ঝিম ধরে বসে আছে খাটের মাঝখানে। একপাশে খালি ব্যাগ পরে আছে। অবাক হয়ে বললেনঃ এখনও ব্যাগ গুছাও নি! আমরা দশটায় রওনা দেব। সময় আর বেশি নেই কিন্তু।

রিতীশ কিছু না বলে ঝিম ধরে বসেই আছে। রকিব উদ্দিন বুঝতে পারছেন না গ্রামে যাবে শুনে এত মন খারাপের কি আছে! তারা ছেলেবেলায় গ্রামে যাওয়ার কথা উঠলে খুশিতে লাফিয়ে উঠতেন। দিগন্তজোড়া মাঠ, পুকুরের জলে দাপিয়ে বেড়ানো, কত রকমের খেলা, আর কত রকমের গাছে যে চড়তেন। সেইসব দিনের কথা ভাবলে এখনো বুকটা আনন্দে ভরে যায়।

তিনি ছেলের ব্যাগটা নিয়ে কাপড় ভরতে ভরতে বললেনঃ একটা টর্চলাইট, কিছু ফার্স্ট এইড, টুথপেস্ট-ব্রাশ, টাওয়েল সঙ্গে নিতে হবে। এগুলো গ্রামে সহজে পাওয়া যায় না।

  • বাবা, আমি কোন দুষ্টামি করব না- মন দিয়ে ইংলিশ স্পোকেন কোচিং করব- প্লিজ, আমাকে গ্রামে রেখে আসিও না। প্লিজ বাবা।
  • ধুর বোকা ছেলে। তোমাকে কি নির্বাসনে কোন নির্জন দ্বীপে পাঠাচ্ছি নাকি? ওখানে গেলে দেখবে তোমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। আর আসতেই চাইবে না।

রিতীশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর আকুতি করে লাভ নেই। বড়রা এত অবুঝ কেন যে হয়!


দশটা দশ মিনিটে সিলভার রঙের এলিয়েন গাড়িটা ধুলো উড়িয়ে রওনা দিল। পেছনের সিটে বসে আছে রিতীশ। রকিব উদ্দিন সবসময় সামনের সিটে বসেন। এটা তার অভ্যাস।

গাড়িটা কাছপুর ব্রীজ পার হতেই যেন শহর থেকে মুক্তি মিলল। রাস্তার দুধারে ধানক্ষেত। সবুজ ধানের চারাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। জানালার কাচ নামিয়ে রকিব উদ্দিন সম্মোহিতের মত এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। সবুজ চারাগুলো তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

  • দেখো রিতীশ, কি সুন্দর ধান ক্ষেত! তার মধ্যে কাজ করছে গ্রামের মানুষগুলো। মনে হচ্ছে শিল্পী আঁকা কোন ল্যান্ডস্ক্যাপ চিত্র দেখছি।
  • তুমি দেখো।

রকিব উদ্দিন বুঝতে পেরেছেন, ছেলে এখনো রেগে আছে। গ্রামের মাটিতে পা দিলে এই রাগ ঝুরঝুরে বালির মত ভেঙ্গে পড়বে, এটা তার বিশ্বাস। তিনি ছেলের কথায় কান না দিয়ে প্রকৃতি দর্শনে মন দিলেন। গাড়িটা গোমতী নদী পার হয়ে একটু দূরে গিয়ে বাঁয়ে বাক নিলো। মাথুরিয়া গ্রামের খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন তারা। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলেন রকিব উদ্দিন। এই বাতাস তার গ্রামের, তার জন্মস্থানের। এই বাতাসে তার অস্তিত্ব মিশে আছে।

গাড়িটা একটা আধাপাকা পুরাতন বাড়ির সামনে থামলো। রিতীশ বিশ্বাস করতে চাইলো যে এই স্যাঁতস্যাঁতে পুরানো বাড়িটার পেছনে নিশ্চয়ই একটা নতুন বাড়ি আছে, যেখানে তারা উঠবে। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখলো, তার বাবা গাড়ির দরজা খুলে হুরমুর করে এই ভাঙ্গা বাড়িটার ভেতরেই ঢুকে পড়লেন, আর ড্রাইভারও গাড়ির পেছন থেকে ব্যাগ সুটকেস বের করে এই বাড়িটার ভিতরেই নিয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিতীশ গাড়ি থেকে নামলো।

images (7).jpeg
দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে


বাড়িটাতে ঢুকতে গিয়ে রিতীশ দেখতে পেল একটা কুচকুচে কালো ভয়ঙ্কর বেড়াল দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। বেড়ালটা রিতীশের দিকে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে রিতীশ চমকে উঠল। চোখদুটি একেবারে স্বচ্ছ, যেন ক্রিস্টালের তৈরি- উজ্জ্বল সাদা, তার মাঝখানে বাদামী রঙের মনি, এত মনযোগ দিয়ে রিতীশের দিকে চেয়ে আছে চোখ জোড়া, দেখে মনে হচ্ছে এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে। শিকার ধরার আগে শিকারী যেমন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তার শিকারের দিকে চেয়ে থাকে, বেড়ালটা ঠিক সেভাবেই তার দিকে চেয়ে আছে। তারপর ওটা দুই পা পিছিয়ে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে এমন ভাবে দাঁড়ালো, দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে।

রিতীশ তার সমস্ত মনযোগ এক করে বেড়ালটার দিকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর যখন সে দেখতে পেল তার ধারনাই ঠিক, বেড়ালটা সত্যি সত্যি তার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে, কয়েকপা এগিয়ে এসে একটা লম্বা লাফ মেরে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সে তীক্ষ্ণ স্বরে চিৎকার করে উঠল। ভেতর বাড়ি থেকে তার বাবা আর একজন মধ্যবয়স্ক লোক ধরফর করে ছুটে আসলেন, এসে রিতীশের পায়ের কাছে বেড়ালটাকে দেখতে পেয়ে তারা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলেন।

রিতীশের পায়ের কাছে বেড়ালটা ঘুরছে আর তার জুতোজোড়া শুঁকছে- আর রিতীশ বেড়ালটা থেকে গা বাঁচাতে দুই পা তুলে লাফাচ্ছে। মধ্যবয়স্ক লোকটা বললঃ এটা পোষা বেড়াল। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

  • কিন্তু এটা আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিলো। আমি চিৎকার না করলে...

যেন রিতীশ খুব মজার কোন জোকস বলেছে, দুজন আবার হো হো করে হেসে উঠল। কিছু কিছু সিরিয়াস কথায় বড়রা এত মজা পায় কেন, কে জানে?

(চলবে..)


আগের পর্বটি পড়ুনঃ কালো বিড়াল (১ম পর্ব)

20200802_181415.jpg



0
0
0.000
1 comments