অপরাধবোধ। অন্তিম অংশ।

avatar
(Edited)

আপনি কি স্বপ্নে তার উদ্দেশ্য জানতে পারেন নি? সে আপনার বাড়িতে আসলো কিছু চুরি করলো না অর্থাৎ সে চোর নয়।তাহলে উদ্দেশ্য কি তার?
হাসান সাহেব!
এতসব প্রশ্নের মধ্যে হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকলেন বলে ভাবলাম লোকটা বোধহয় আবার বিরক্ত হয়েছে। আমি আর কিছুই বললাম না।ওনার কথা শোনার উদ্দেশ্যে ওনার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। উনি বললেন,
আজ থেকে এগারো বছর আগে আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন আপনার জীবনের সবথেকে বড় সুখের দেখা পেয়েছিলেন!
মানে? কিসের কথা বলছেন আপনি?
উপমা। আপনার প্রেমিকা।মেয়েটা আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো।
ওর কোনো চাওয়াই অপূর্ণ রাখেননি আপনি।তার বাড়ি ভার্সিটি থেকে খুব একটা দূর ছিলো না। তবুও তাকে আপনার যাওয়ার ভাড়া দিয়ে রিকশায় তুলে দিয়ে বেকার আপনি পুরো রাস্তাটাই হেঁটে হেঁটে যেতেন।আপনার কি মনে আছে?
হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম আমি! মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিলোনা।pexelsluizclas556667.jpg

ভাবছেন আমি কি করে জানলাম? ওইযে প্রিকগনিশন ড্রিম! যাইহোক! আপনার প্রেমিকা এক বৃষ্টির রাতে আপনাকে ফোন করে জানালো তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আপনি কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে বললেন, বেরিয়ে এসো তুমি।আল্লাহই আমাদের পথ দেখাবেন।সে এক কাপড়ে পালিয়ে এলো। কোনো এক ঝোপের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলো আপনার অপেক্ষায়। আপনার মাথায় তখন হঠাৎ চিন্তা এলো, কাজ টা কি ঠিক হবে? প্রেমিকা ভাগিয়ে আনলাম খাওয়াবো কি? রাখবো কোথায়? কিন্তু তখন কি ভাবনার সঠিক সময় ছিলো? মেয়েটা যে কিছুই ভাবার প্রয়োজন বোধ করেনি! আপনার একটা কথায় বেরিয়ে এলো। আপনি পৌছুলেন প্রায় দেড় ঘণ্টা পর। গিয়ে আপনার প্রেমিকাকে দেখতে পেলেন না। বেঈমান বলে মনে মনে এক গালি দিয়ে ফোন লাগালেন তাকে। ঠিক সেখান টার ঝোপের আড়াল থেকেই আপনার প্রেমিকার ফোন বেজে উঠলো। আপনি অবাক হলেন! গভীরে গেলেন আর দেখলেন আপনার প্রেমিকাকে। বিবস্ত্র,বিধস্ত! আপনার সেদিকটায় অপলকে তাকিয়ে থাকা আর তার ঠিক ৪/৫ মিনিট পর আপনি প্রস্থান করা! আপনার প্রেমিকার কাতরানো আপনাকে কাঁদায়নি।আপনাকে কাঁদিয়েছে সেই কঠিন সত্য "আপনার প্রেমিকার সতিত্ব শেষ হয়েছে! সে ধর্ষিতা!"
আমি দর দর করে ঘামতে লাগলাম। চোখের সামনের সবকিছু হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে গেলো! আমি রেদোয়ান সাহেবকে আর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিনা!
জানেন?আমি গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম আপনি পরলোক গমন করেছেন।অবাস্তব কিছু? মৃত্যু টা স্বাভাবিক নয় কি?
হাসান সাহেব! উপমার আমার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। এই পৃথিবীতে আপনার মতো কাপুরষ যেমন আছে! তেমন সুপুরুষ ও আছে। তারা উপমা কে এই অবস্থায় দেখে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করেছিলো। সে যাত্রায় উপমা বেঁচে যায়! ওর পরিবার আমাদের সব জানিয়েছিলো।আমি আমার মায়ের অনুমতি নিয়ে উপমাকে বিয়ে করি।মাঝরাতে মেয়েটা ডুকরে কেঁদে উঠে আমার বুকে আপনার নাম নিয়ে।
বেঈমান!
লোকটা একটু থেমে আবার বলে,
আমার স্ত্রী এর কাছ থেকে দূরে থাকুন! আমার স্ত্রীর মানসিক ভারসাম্যহীনতার সুযোগ নেবেন না! গতরাতে আমি আপনার চেহারা স্পষ্ট দেখেছি! কিচ্ছু বলিনি, কিচ্ছু করিনি আজ আপনাকে শাস্তি দেবো বলে!
আপনার পাশের ফ্ল্যাটের কলেজ প্রফেসরের স্ত্রী আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা জানতে পেরে আপনি আমার অনুপস্থিতিতে ওর কাছে ছুটে গিয়েছেন।ওকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছেন।আপনার মতো মানুষেরা প্রেমিক হতে পারে জীবনসঙ্গী নয়! না আমি স্বপ্নে দেখিনি এসবের কিছুই!স্বপ্নে ভবিষ্যৎ হয়তো দেখা যায় অতীত নয়! আমার বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে আমার স্ত্রী এর প্রটেকশনের জন্য! আর আপনাদের অতীতের কথা কি করে জানলাম? সে সয়ং আমাকে বলেছে।সে ভয় পায়। ভিষণ ভয় পায় আপনাকে।আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকে দেখে আমার স্ত্রী অতীতের সব কথা মনে করতে পেরেছে! সবকিছু আমাকে জানিয়েছে!

সবগুলো কথাই কেমন যেন খুব ঠান্ডা মাথায় বলে গেলেন প্রফ.রেদোয়ান। আমার দুনিয়াটা মুহূর্তেই ওলটপালট হয়ে গেলো! আমি এক দৃষ্টিতে ওনার দিকে চেয়ে রইলাম।কেন যেন মনে হচ্ছে তিনি এমন কিছু বলতে চলেছেন যা মুহূর্তেই আমাকে নিঃশেষ করে দেবে! তিনি আবার আমার নাম ধরে ডাকলেন। বললেন,
হাসান সাহেব! আপনার অপরাধবোধ থেকে আপনি আজ পর্যন্ত বিয়ে করতে পারেননি। আমি অবাক হই! আপনার মতো পাপীর অপরাধবোধ এতোটাই সামান্য !

শেষ কথা টি বলেই রেদোয়ান সাহেব নিজের ফ্ল্যাট এ ফিরে এলেন। স্ত্রী কে জড়িয়ে সে রাত টা স্বস্তি নিদ্রায় যাপন করলেন।
পরদিন সকাল বেলা হৈ-হুল্লোড় শোনা গেলো! বিশাল কাণ্ড ঘটেছে! হাসান সাহেবের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে তার নিজেরই ফ্ল্যাটে। খবর টা শুনে তারই পাশের ফ্ল্যাটের প্রফেসর রেদোয়ান হোসাইন খবরের কাগজের আড়ালে ঠোঁট টা কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে রহস্যময় এক হাসি হাসলেন।

সমাপ্ত .....

Pictures are taken from pexels.com



0
0
0.000
0 comments